ঢাকা বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ , ১৪ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সাতক্ষীরায় ‘ভাটির টানে, বাদার গানে’ প্রাণের উচ্ছ্বাস

দেশবার্তা

এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সর্বশেষ

সাতক্ষীরায় ‘ভাটির টানে, বাদার গানে’ প্রাণের উচ্ছ্বাস

উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন-জীবিকা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিনোদন-সংস্কৃতি, চাওয়া-পাওয়াসহ হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনার সংগ্রামী গল্প তুলে ধরে সাতক্ষীরায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ভাটির টানে, বাদার গানে’ অনুষ্ঠান। জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাঘ বিধবা সোনাভানু ও আইলাকালীন জন্মগ্রহণকারী শিশু বন্যা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘বারসিক’ এর আয়োজনে অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও সুন্দরবন সুরক্ষায় যুবদের ভূমিকা শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের টিকে থাকার গল্প, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনার দাবিতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনী, কৃষি জমি সুরক্ষায় নাগরিক মঞ্চ, আমাদের উপকূলীয় বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্থানীয়দের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দুর্যোগ সচেতনতায় যুবদের আয়োজনে পথনাটক, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি পরিবেশনা ও পুরস্কার বিতরণী।

বক্তৃতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিরোধ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় যুবদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী মানুষ। পরিবেশ দূষণের ফলেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা। এর ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। তাই আগামীর বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুব সমাজকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান বক্তারা। 

অনুষ্ঠানে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ হাসি কান্না মান-অভিমানের গল্প তুলে ধরেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।  
‘ভাটির টানে, বাদার গানে’ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দাবি নিয়ে ঘোষণা করা হয় ‘উপকূল’। দাবিগুলোর মধ্যে ছিলো টেকসই বেড়িবাঁধ চাই, আপনার পরিবেশ আপনার দায়িত্ব, বেঁচে থাকার অধিকার চাই, জলবায়ুর সুবিচার চাই, ত্রাণ চাইনা বাঁচতে চাই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিবেশকে হতে দিব না বিপন্ন, গাছ লাগাই ভবিষ্যৎ বাঁচাই, আমাদের সুন্দরবন আমাদের অক্সিজেন ইত্যাদি। অনুষ্ঠানটি শতশত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতি জন, বনজীবী, কৃষক-কৃষাণীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। 

অনুষ্ঠানে শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি, চ্যানেল আই কৃষি পদকপ্রাপ্ত শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আব্দু্ল হামিদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মানবাধিকার কর্মী মাধব দত্ত, নাগরিক নেতা আলী নূর খান বাবুল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, আশরাফ হোসেন, সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, সংস্কৃতিজন হেনরী সরদার, কর্ণ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হুমায়ুন কবির, ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এসএম শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক রনজিত বর্মন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিক-এর জেলা সমন্বয়কারী মাসুম বিল্লাহ, আঞ্চলিক সসমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, বারসিক-এর ধনঞ্জয় মন্ডল, গাজী মাহিদা মিজান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিক-এর মফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও কৃষি জমি রক্ষায় কৃষি জমি রক্ষায় প্রস্তাবিত আইন ও নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশের সকল ধরনের কৃষিজমি রক্ষা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নিদিষ্ট শিল্পাঞ্চলের বাইরে কৃষি জমির ওপর যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি জমিতে ইট ভাটা নির্মাণ, বেচাকেনা সম্পূর্ণরুপে বন্ধ ঘোষণা করতে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি চত্ত্বরে স্থানীয় উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে মিশে থাকা নানা পণ্যের সমন্বয়ে দেয়া হয় স্টল। স্টলে শোভা পায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বাঁশ ও বেতের তৈরি গৃহস্থালির সামগ্রী, পরিবেশ বান্ধব বন্ধু চুলা, সুন্দরবনের গোলফল, গোলপাতা, মধু, মোম, বাঁশি, জাল, খারাসহ নানা জিনিস। এ ছাড়া স্থানীয় জাতের ১৫০ প্রজাতির ধানবীজ প্রদর্শনী করেন কৃষক আব্দুল বারিক। এ ছাড়া তেলাকুচা, শাপলা, সজিনা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ, কচুফুল, ডুমুর, তিতবেগুন, ব্রাহ্মী, কলার মোচাসহ স্থানীয় কুড়িয়ে পাওয়া সবজির সমারোহ দর্শকদের মন কাড়ে এ অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে নৃত্যের তালে, গানের সুরে ও নাটকের অভিনয়ে ফুটে ওঠে উপকূলীয় মানুষের জীবন সংগ্রামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। শিশু কিশোর যুব বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণির মানুষ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে  হৃদয়হরা এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান শেষে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপকূল কমিটি ঘোষণা করা হয়।

জনপ্রিয়