বগুড়ার ধুনট উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম দুর্নীতি-অনিয়মের আখড়া বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল কর্মীরা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজো করে দলকে দুর্বল করার অভিযোগও করেন তারা। টাকার বিনিময়ে নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে এখানকার বিএনপি। লজ্জাজনক হলেও সত্য, শুধু অভ্যন্তরীণ আধিপত্য বজায় রাখাকে কেন্দ্র করে অর্থ লেনদেনে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ও পৌর কমিটি করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। যে কারণে আগামী ২ নভেম্বর বগুড়া জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটার হতে পারেননি ধুনটের কোনো নেতাকর্মী।
সূত্রের দাবি, ধুনট উপজেলায় পৌর এবং ১০টি ইউনিয়নসহ ১১টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে পড়া দলকে গতিশীল ও আন্দোলনমুখী করতে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে ধুনটের জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল মতিন মণ্ডলকে আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ ও তৃণমূল কর্মীদের বিরোধের জেরে দীর্ঘ তিন বছর উপজেলার কোনো একটি ইউনিটেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। পরবর্তীতে আহ্বায়ক আব্দুল মতিন মণ্ডল ও আবুল কালাম আজাদসহ তিন বিএনপি নেতার মৃত্যু হলে কমিটিতে থাকা ১ নম্বর সদস্য উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৌহিদুল আলম মামুনকে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত সম্মেলন করে প্রত্যেক ইউনিটকে পৃথকভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অর্থলোভী হয়ে ওঠায় ক্ষতির মুখে পড়ে দল। পদ দেয়ার কথা বলে একের পর এক নগদ অর্থসহ নানা রকম সুবিধা হাতিয়ে নেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নগদ টাকা দেয়া-নেয়ার বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গে স্বীকার করলেও পদ না পাওয়া এবং পদ হারানোর ভয়ে গণমাধ্যমে নাম প্রকাশে রাজি হননি তারা। ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আতিকুল করিম আপেল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল কাইয়ুম টগর, চিকাশী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাকির হোসেন জুয়েল, বিএনপি নেতা রবিউল হাসান, গোলাম রব্বানী জানান, ধুনটের কোনো নেতাকর্মী জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটার হতে পারেননি-এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থ লেনদেনের বিষয়ও। সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্বের সুযোগে কমিটি গঠনে ধুনটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়ম করেছেন। যদিও বিষয়গুলো অস্বীকার করেন সম্মেলনে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির প্রভাবশালী নেতারা।
ধুনট পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকতার আলম সেলিম জানান, ধুনটের নেতাকর্মীদের জেলা বিএনপির কাউন্সিল থেকে বাদ দেয়া শুধু লজ্জা বা অবমূল্যায়নই নয়, বরং দলকে আরও দুর্বল করার ষড়যন্ত্র। দু,পক্ষের গ্রুপিংয়ের শিকার তৃণমূল কর্মীরা। উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৌহিদুল আলম মামুন দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বাতির নিচে অন্ধকার। জেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ভোটার তালিকা তৈরির আগে ধুনটের উপজেলা ও পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় ধুনটের কোনো নেতাকর্মী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। অভিভাবক হিসেবে এর দায়ভার সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজকেই নিতে হবে। তার উচিত ছিল,তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে দলকে শক্তিশালী করাসহ আন্দোলনকে বেগবান করতে কমিটি গঠনে কার্যকর ভূমিকা নেয়া।