ইসকনকে নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তেজনা থেকে যৌথ বাহিনীর ওপর হামলার জেরে একদিন বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলির সকল ধরনের দোকান খুলে দেয়া হচ্ছে। সকাল দশটা থেকে জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সিলগালা করা দোকানগুলো খোলা হচ্ছে।
তবে দোকানদাররা অভিযোগ করেন, দোকান খোলার পর যে সকল দোকানে সিসিটিভি ক্যামরা আছে সেগুলোর হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে বিভিন্ন দোকান ও মার্কেটের সিলগালা করা তালা খুলে দেন। দোকানিরা তাদের দোকানে প্রবেশ করেন।
পরে দামপাড়ায় সেনাবহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডে সংবাদ সম্মেলনে যৌথবাহিনীর ট্রাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “এটা ওষুধ ও স্বর্ণ ব্যবসার ‘হাব’। এটা একদিনের জন্য বন্ধ ছিল। আমাদের তদন্ত কার্যক্রমও চলবে, পাশাপাশি অর্থনৈতি চাকা যাতে স্থবির হয়ে না যায় সেটাও আমরা দেখছি। আজ থেকে সেটার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।”
ইসকন নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে তুলকালাম ঘটে যায়।
সেখানকার মিয়া শপিং সেন্টার মার্কেটের একটি দোকানের মালিক ওসমান মোল্লা ইসকনকে নিয়ে ‘ব্যাঙ্গাত্মক’ পোস্ট করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধরা মঙ্গলবার রাতে দল বেঁধে মার্কেটের সামনে জড়ো হয়ে ওই দোকান ঘিরে ফেলে।
পরে পুলিশ গিয়ে পোস্টদাতা ওসমানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেসময় তারা পুলিশকে ধাওয়া ও যৌথ বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। অ্যাসিডও নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
রাত সাড়ে ৯টার পর সেনাবাহিনী যৌথভাবে হাজারী গলির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা ঘটনাস্থল থেকে ৮২ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর হাজারী গলির সব দোকানপাট ‘সিলগালা’ করে বন্ধ করে দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার হাজারি গলির ওষুধ ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রশান্ত কুমার পাণ্ডে বলেন, “এটার সঙ্গে আমাদের রুটি-রুজির বিষয় জড়িত। দোকান যাতে খুলে দেয়া হয় সেজন্য আমরা সেনা বাহিনীকে অনুরোধ করেছিলাম। তারা আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সকালে দোকান খুলে দিয়েছে।”
এদিকে হাজারী গলিতে যৌথবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করে মামলাও হয়েছে।
বুধবার গভীর রাতে এই মামলা হয় বলে কোতোয়ালি থানার এসআই মিজানুর রহমান জানান।
মামলায় ‘যৌথবাহিনীর কাজে বাধা দান ও অ্যাসিড নিক্ষেপের’ অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী।
আর নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) তারেক আজিজ বলেন, “এ মামলায় মোট ৪৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে যৌথবাহিনীর হাতে আটক ৮২ জনের মধ্যে বাকি ৩৩ জনকে যাচাই বাছাই শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”