অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলমের কাছে এই খোলাচিঠি হস্তান্তর করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে পার্বত্য চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমাভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম চিঠি পাওয়ার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা খোলাচিঠিটি তাঁর কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য দীপায়ন খীসা ও মুর্শিদা আক্তার।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন ও খায়রুল ইসলাম চৌধুরী চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
চিঠিতে বলা হয়, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন সরকারের অভিযাত্রায় ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনার নতুন বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৬ বছর ধরে চুক্তির মূল উপাদানগুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসী জনগণ এবং সারা দেশের নাগরিকদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই নয়; বরং বাংলাদেশের আদিবাসীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখা এবং একই সঙ্গে দেশের জাতীয় ঐক্যের জন্য অপরিহার্য।
চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রায় দুই বছর সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পক্ষে জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করে আসছে। পাহাড়ি জনগণ এবং বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর যাতে একই সঙ্গে উচ্চ স্বরে এবং স্পষ্টভাবে শোনা যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের আন্দোলন পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র-যুব ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করেছে।’
চিঠিতে সাত দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট সময়সীমাভিত্তিক একটি সুস্পষ্ট ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এ ছাড়া চুক্তির বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাহাড়ের শাসনকাঠামো বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ, আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন, ভূমি অধিকার এবং ভারত থেকে আগত পাহাড়ী শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠা।
এসব দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন শুরু করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার দাবি করা হয়। এ জন্য পাঁচ বিষয় দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবিও রাখা হয় চিঠিতে। সেগুলো হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সক্রিয় করা, আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সংলাপ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদ পুর্নগঠন এবং সমতলের আদিবাসীদের ভূমি ও মানবাধিকার রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ।