চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ২৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করে তাদের ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগ এবং ইসকন’ নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) নগরের কোতোয়ালী থানায় বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন খুলশী থানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—সাবেক কাউন্সিলর জহুর লাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী, ইসকন নেতা প্রবীর চন্দ্র পাল, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী শুভ কান্তি দাস এবং চট্টগ্রাম এডভোকেটস ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি নাথ।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ২৬ নভেম্বর তার ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য তিনি একজন আইনজীবীর চেম্বারে যান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় দেখতে পান ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকন সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র সহ অবস্থান করছে। বাদির মাথায় টুপি দেখে আসামিরা ‘শিবির ধর, শিবির ধর’ বলে মারধরের জন্য এগিয়ে আসে।
তখন তিনি ভীত হয়ে দৌড়ে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে অর্থাৎ মেথরপট্টিতে ঢুকলে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে অজ্ঞাত একজন লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। তখন আসামি বিজয় তার হাতে থাকা ছোরা দিয়ে জবাই করার হুমকি দেয়।
পরে উপস্থিত জনতা এগিয়ে আসলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর তিনি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে।
এছাড়া গত (শনিবার) আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা এবং পাশাপাশি আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের উপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেছেন নগরের কোতোয়ালী থানায়।