গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৬ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ না থাকা ও কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে না পারায় ১৫ ডিসেম্বর থেকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানা লে-অফ বা বন্ধ ঘোষণা করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও শ্রম আইন অনুযায়ী, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোয় কাজ করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকেরা বলেন, আজ সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকেরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী ও চক্রবর্তী এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া আশপাশ থেকে ময়লা আবর্জনা এনে সড়কে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারীরা। এতে ওই সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ, কাশিমপুর থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
কারখানাশ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানায় কাজ আছে। আমরা ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সময়মতো বেতন–ভাতাও পেয়েছি। এখন কাজ নেই, এই মিথ্যা অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না। কারখানা বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক অসহায় হয়ে পড়েছেন।’
শ্রমিক রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমি ও আমার স্বামী দুজনই বেক্সিমকোতে চাকরি করি। আমাদের টাকায় ১০ থেকে ১২ জনের সংসার চলে। এখন দুজনেরই কাজ না থাকলে কী করে খাব?’
নাওজোড় হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, মহাসড়ক অবরোধ করায় ওই সড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। ওই রুট ব্যবহারকারীরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাতায়াত করছেন। ঢাকামুখী উত্তরবঙ্গের দূরপাল্লার যানবাহনগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর এলাকা ও কালিয়াকৈর-ধামরাই আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে যোগাযোগ স্বাভাবিক রেখেছেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু তালেব বলেন, শ্রমিকেরা কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেছের। চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। গত রোববার সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই কমিটির তৃতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে আরও দুই মাস জনতা ব্যাংক থেকে ঋণসহায়তা দেয়া হবে। তারপর আর কোনো সহায়তা নয়। উপদেষ্টা কমিটির এ সিদ্ধান্তের পর ওই দিনই ১৬ কারখানায় লে-অফ ঘোষণা করে বেক্সিমকো।