কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা দিয়ে আবদুল হাই কানু নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে সোমবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সাতজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ আসায় পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিষয়টি তদন্ত ও মাঠে অভিযান চালাচ্ছে একাধিক টিম।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এসব তথ্য জানান চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান।
এদিকে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা নেতারা।
আরো পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা
ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা কোথায় আছেন তাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে তার পরিবার জানিয়েছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় অজ্ঞাত স্থানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে গ্রেফতার এড়াতে আগেই জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, মুক্তিযোদ্ধা কানু ছিলেন উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মুক্তিযোদ্ধা কানুর সঙ্গে স্থানীয় সাবেক এমপি ও রেলপথ মন্ত্রী এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে ছিল দলীয় বিরোধ। এলাকায় ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলায় তিনি (কানু) ও তার ছেলে বিপ্লব ছিলেন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ মামলায় কানু গ্রেফতারও হন। এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়াও ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মাহফুজুর রহমান সোমবার দুপুরে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত করা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এমন ঘটনা জামায়াত সমর্থন করে না। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে জামায়াতকে জড়িত করা হচ্ছে। এতে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি প্রবাসী আবুল হাসেমসহ যাদের ভিডিওতে দেখা গেছে তারা আমাদের দলের কোনো পদে নেই। তবে তারা দলের কর্মী ও সমর্থক হতে পারে। তারা কানুর সঙ্গে ব্যক্তিগত ক্ষোভ কিংবা বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। যারা জড়িত আমরাও তাদেরগ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
যদিও কানুর ছেলে স্থানীয় বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার বাবা স্থানীয় সাবেক এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে হত্যাসহ ৯টি মামলার আসামি হয়েছেন। দল ক্ষমতায় থাকলেও আমিসহ আমার পরিবারের অনেকেই হামলা হামলার শিকার হয়ে গত ১০ বছর এলাকায় আসতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, পেয়ার, বেলাল, ইসমাইল, রাসেল, ফারহান, ফরহাদ, নয়নসহ ১৫/২০ জন আমার অসুস্থ বাবাকে স্থানীয় পাতড্ডা বাজার থেকে ধরে নিয়ে স্কুলের সামনে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিওতে তাদের ছবিও আছে। বাবা আগে থেকেই অনেক অসুস্থ, ঘটনার পর তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কানু আওয়ামী লীগ করেও বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। কারাগারে গেছেন। তার ভুলক্রটি থাকলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ জানানো ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা সরকারকে বলবো ১২ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। না হয় সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামবেন।’
এর আগে রোববার দুপুরের দিকে চৌদ্দগ্রামের নিজ এলাকা কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করা হয়। জুতার মালা পরিয়ে তাকে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকা এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় ক্ষমা চেয়ে ও এলাকায় আসবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তার গ্রামের বাড়ি ঘটনাস্থলের অদূরে লুদিয়ারা গ্রামে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে ৭/৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম। তবে ঘটনার পর থেকে জড়িতদের কেউই এলাকায় নেই।