রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা, বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক শুনে জামিন নামঞ্জুর করেন।
চিন্ময়কে এদিন আদালতে হাজির করা হয়নি। আদালতে আইনজীবীর উপস্থিতিতে আসামির ভার্চুয়াল হাজিরায় জামিন শুনানি হয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, এর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাবার সুযোগ রয়েছে৷
চিন্ময় দাসের আইনজীবী অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, “জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
তবে আদালতে তার সমর্থকেরা যাতে কোনোপ্রকার বিশৃঙ্খলা করতে না এজন্য কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় দাসের জামিন না মঞ্জুর হলে ওইদিনই চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু ওইদিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এদিকে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে রবীন্দ্র ঘোষ নামে এক আইনজীবী এসে চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় আদালত নাকচ করে দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে জামিন শুনানির দিন রাখেন।
গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদোহ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এটি নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। দুপুর পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।
একপর্যায়ে বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরো কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।