বরিমালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার (২৭ মার্চ) দিনগত রাতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে মামালাটি দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, সাংবাদিকরা কোন দলের নয়। তারা তাদের কাজ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাদের সেই কাজে বাধা দেওয়া, সাংবদিকদের মারধর করা, তাদের মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া, ক্যামেরা-মোবাইল ফোন ভাঙচুর করার মতো সন্ত্রাসী কার্যক্রম কেউ করে পার পেয়ে যাবেন, সেটাও ঠিক নয়। সে কারণে আমরা আইনগতভাবে যেমন বিষয়টি দেখেছি, তেমনি সন্ত্রাসীর বিচারও বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি করেছি।
তিনি বলেন, মামলায় ছাত্রদল নেতা সোহেল রাঢ়িসহ ১৩ জনসহ ও অজ্ঞাতপরিচয় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমনা জানান, সাংবাদিক খালিদ সাইফুল্লাহ রাতে একটি লিখিত এজাহার দিয়ে গেছেন। সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি।
বরিশালে ২ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত: মোটরসাইকেলে আগুন
এদিকে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের দায় দল নেবে না বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিএনপি নেতারা।
পাশাপাশি তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আহত দুই সাংবাদিকের খোঁজখবরও নেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি স্থানীয় দৈনিকের ফটোসাংবাদিক নুরুল আমিন রাসেল ও মনিরুজ্জামানকে দেখতে যান বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন, সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী এনায়েত হোসেন বাচ্চু, নুরুল আমিন প্রমুখ।
এ সময় তারা আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং বলেন, সাংবাদিকরা কোনো দলের হলে তাদের পাশে এসে আমরা দাঁড়াতাম না। আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার রয়েছি। কারো ব্যক্তিগত ঝামেলার দায় দল নেবে না। আর দলের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কোনো অন্যায় করে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশালের ঘটনা এরই মধ্যে কেন্দ্র অবগত হয়েছে। তারাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। তবে আপনারা (সাংবাদিকরা) গোটা দলকে দোষী করবেন না, এটা আমাদের প্রত্যাশা। কারণ, বিএনপি কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না।
এদিকে, ঘটনার পরপরই বরিশাল মহানগর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। সেইসঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি এক বিবৃতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এন আমিন রাসেলসহ কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
পাশাপাশি বিবৃতিতে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। হামলাকারীরা ছাত্রদলের কেউ হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বিবৃতিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
অপরদিকে, আদালত প্রাঙ্গণ ও তার সামনে দিনের বেলা মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির মতো ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে সাংবাদিক মহল।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আদালত প্রাঙ্গণে ও তার সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও তাদের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক!
দিনের বেলা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বরিশালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতির বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্রদলের ওই সব নেতারা। পাশাপাশি আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সেইসঙ্গে পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটিয়ে সন্ত্রাসের জানান দিলো হামলাকারীরা। পুলিশ এর দায় এড়াতে পারে না। হামলাকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি যে সব পুলিশ সদস্যের সামনে এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, বৃহষ্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে বরিশাল জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ির নেতৃত্বে ১২/১৫ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী স্থানীয় দৈনিকের ফটো সাংবাদিক এন আমিন রাসেল ও মনিরুজ্জামানের ওপর হামলা চালায়। তাদের মারধর করাসহ, ক্যামেরা, দুটি মোবাইলফোন ভাঙচুর এবং নগদ টাকা-পয়সা লুটে নেয় হামলাকারীরা।
