ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

‘জন্মদিনের আগের দিন আমার ভাইটাকে মেরে ফেলা হলো’

শিক্ষা

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ২৩ মার্চ ২০২৩

সর্বশেষ

‘জন্মদিনের আগের দিন আমার ভাইটাকে মেরে ফেলা হলো’

পটুয়াখালীর বাউফলে দশম শ্রেণির দুই ছাত্রকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রায় ২০ ঘণ্টা গেছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ছাত্রদের স্বজন, সহপাঠী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা।

এর আগে গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উপজেলার ইন্দ্রকুল উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মো. নাফিজ মোস্তফা আনসারী (১৫) ও মো. মারুফ হোসেনকে (১৫) পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল কিশোর।

নিহত দুজনের একজন নাফিজের আজ বৃহস্পতিবার জন্মদিন বলে জানিয়েছে মামাতো ভাই শওকত হোসেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আজ ২৩ মার্চ আমার ছোট ভাইটার (নাফিজ) জন্মদিন ছিল। এর আগের দিন ওকে মেরে ফেলা হলো। আপনারা লিখে কী করবেন? এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’

নিহত দুই ছাত্র ইন্দ্রকুল এলাকার বাসিন্দা। মারুফের বাবার নাম মো. বাবলু হাওলাদার  এবং নাফিজের বাবার নাম মিরাজ মোস্তফা আনসারী। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বিকেলে একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিজ, মারুফ, এনামুল ও সিয়ামের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারুফ, সিয়াম, এনামুল ও নাফিজকে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মারুফ ও নাফিজকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

একই ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ইন্দ্রকুল উচ্চবিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ সকালে বিদ্যালয়ে আসার পর নাফিজ ও মারুফের সহপাঠী এবং অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সহপাঠী মো. শিহাব উদ্দিন বলে, ‘গতকাল ওদের সঙ্গে পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছিলাম। এভাবে ওদের মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছি না।’

ইন্দ্রকুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘অষ্টম পিরিয়ডে দশম শ্রেণি উচ্চতর গণিতের ক্লাস করিয়েছি। ওই সময় ওরা (নাফিজ ও মারুফ) দুজনেই ক্লাসে ছিল। এর ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। ওরা দুজনেই অনেক মেধাবী ছিল।’

তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল ওই ঘটনার পর পরই তিনি বাউফল থানায় গিয়ে অবহিত করেছেন। এর পর প্রায় ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। অথচ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

জানতে চাইলে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করছি, খুব কম সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’

আজ সকালে নাফিজ ও মারুফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। মারুফের ফুফু মোসা. মর্জিনা বেগম (৫০) বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আমার বাবারে শেষ কইরা দিছে। আমার ভাই কেমনে বাঁচবে?’

এদিকে নাফিজের নানা আবদুল হক (৭৫) ও নানী মোসা. সেতারা বেগম (৭০) যেন বেঁচে থাকার অবলম্বন হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁদের কাছেই বড় হয়েছে নাফিজ। ছোট থেকে নাফিজের বেশির ভাগ সময় কেটেছে নানা বাড়িতে। এর মধ্যে আজই ছিল নাফিজের জন্মদিন।

নিহত শিক্ষার্থীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নাফিজ ও মারুফের লাশ বর্তমানে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের জন্য নাফিজ ও মারুফের মা-বাবা সেখানে অবস্থান করছেন।

জনপ্রিয়