সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করছি। যেন এখন কথা কম বলার দায়িত্ব বেড়েছে। সবাই যেন কথা বলতে ভয় পায়। গতকাল সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা এলজিইডি মিলনায়তনে ‘সাতক্ষীরায় মানবাধিকার পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
অধ্যাপক রেহমান সোবহানকে দেশের এক নম্বর বুদ্ধিজীবী উল্লেখ করে তার প্রসঙ্গ টেনে সুলতানা কামাল বলেন, ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার একটি লেখায় লিখেছেন, ‘আগে একটি লেখা খুব সহজেই লিখে ফেলতে পারতাম, কিন্তু এখন একটি লেখা লিখতে গেলে ১০ বারেরও বেশি ভাবতে হয়।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘অনেক মন্ত্রী আছেন, তারা ভাবেন আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি কথা হয়। তারাও বলেন আপা আপনি একটু প্রধানমন্ত্রীকে বইলেন। কিন্তু তারা নিজে প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন না। তারাও কথা বলতে ভয় পান।’ তিনি আরও বলেন, একটা অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আমাকে বলছিলেন আপা আমরা কিন্তু আপনাকে অ্যারেস্ট করতাম। কিন্তু আপনি এত হাই প্রোফাইল যে, করতে পারিনি। তখন আমি বললাম এই তো আপনাদের সমস্যা। প্রোফাইল ভারী হলে আপনারা কিছুই করতে পারেন না। লো প্রোফাইলের লোকজন হলে ধরে নিয়ে যান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, আমি একজন নাগরিক হিসেবে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও মুক্ত নির্বাচন চাই। যেখানে আমাদের ভোটের অধিকার, নির্বাচনের অধিকার থাকবে। আমরা জবাবদিহি করতে পারব।
আগামী নির্বাচনে বড় দলগুলোর দ্বিমুখী অবস্থান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারেই যে সবকিছুর সমাধান তা নয়। আমিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলাম। স্বাধীনভাবে কাজ না করতে দিলে কোনো কিছুই সম্ভব না। নির্বাচন কমিশনকে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সাতক্ষীরা জেলা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ও সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল, সিনিয়র সাংবাদিক এম কামরুজ্জমান, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জাসদ নেতা ইদ্রিস আলী, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবুল কালাম, দলিত নেতা গৌরপদ দাশ প্রমুখ।
সভায় জেলার মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাতক্ষীরা জেলা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মুনিরুদ্দীন।