জিডিপির অনুপাতে গত এক দশকে বাড়েনি রাজস্ব আয়। যদিও এ সময় জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটেছে। আবার এ সময় কমেছে রাজস্ব আয়-জিডিপির অনুপাত। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সরকারের রাজস্ব (কর ও অনুদান)-জিডিপি অনুপাত ছিলো ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এক দশক পর তা নেমেছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশে।
ঋণ পরিশোধের প্রধান উৎস রাজস্ব। জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণ ও রাজস্ব আয়ের এ অসামঞ্জস্যতা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করছে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। তাদের বক্তব্য হলো লক্ষ্যমাফিক রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতায় সরকারের ঘাটতি বাজেটের আকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সরকারের ঋণের বোঝাও। এ মুহূর্তে বাজেটের অন্যতম বড় ব্যয়ের খাত হয়ে উঠেছে ঋণের সুদ পরিশোধ। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে।
তাদের ভাষ্যমতে, কর-ডিজিপি অনুপাত ১২-১৩ শতাংশে উন্নীত করা গেলে সরকারের বিদ্যমান ঋণ পরিশোধ সম্ভব। সেক্ষেত্রেও বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু সরকার এরই মধ্যে মেগা প্রকল্পে আরো বেশি বিদেশী ঋণ নেয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আয় বাড়িয়েও যথাসময়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধ দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রাজস্ব আয়ে সরকারের ব্যর্থতার কারণে প্রতি বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্বের কোনো দেশই এত কম রাজস্ব আয় দিয়ে চলে না। বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি বাড়ানো সম্ভব না হলে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী উৎস থেকে সরকারের ঋণ বাড়বেই। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত অন্তত ২০-২২ শতাংশে উন্নীত করতে না পারলে সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যেই বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। এ অবস্থায় ডলারের সংস্থান না হলে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে সরকারকে চাপে পড়তে হবে। কারণ এরই মধ্যে বিদেশী ঋণ পরিশোধ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।