ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটিকে বিশ্বের নির্বস্তক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ২০১৭ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই সারাদেশে কদর বেড়েছে শীতল পাটির। একটা সময় ছিলো বাঙালির রোজকার জীবনে শীতল পরশ বোলানো শীতল পাটির চাহিদা ছিলো সবার ওপরে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঁচামালের ঊর্ধ্বমুখী দাম, বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের জৈনপুর গ্রামের কুটির শিল্পীরা।
বাঙালির প্রাণ ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে শীতল পাটিকে রক্ষা করা উচিত। তবে অভাব অনটন এবং নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চারশ’ বছরের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখছেন পাইট্যাল পাড়ার পাটি শিল্পীরা।
পাটিকর জাবেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, দুই আঁটি মোতরা ছেঁটে সরু করে বিভিন্ন আকারের বেতি বানিয়ে পাটি তৈরি হয় একটি। ২০০ টাকায় কিনতে হয় দুই আঁটি মোতরা। এতে প্রতিটি পাটি তৈরিতে খরচ হয় ৩৫০-৪০০ টাকা। যা বাজারে বিক্রি করে ৫০ টাকার অধিক মুনাফা অর্জন করতে হিমশিম খেতে হয়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা আসেনি এখানে।
নেত্রকোণা জেলার পাটি শিল্প এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বহু আগে থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের একটি বিশাল অংশ এই শীতল পাটি তৈরি করে আসছিল। কিন্তু নানাবিধ কারণে পাটিকরদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্পের ঐতিহ্য। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতো জৈনপুর পাইট্যাল পাড়ার নারী পুরুষের পাটি বানানোর কর্মব্যস্ততা। এখন আর এই চিত্র নেই বললেই চলে। এ অঞ্চলের সুনাম এখন অনেকাংশে কমে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে রুচির, তাই শীতল পাটির জৌলুস কমে এসেছে। প্রশাসন এবং সকলের মিলিত উদ্যোগই পারে এই ঐতিহ্যের ধারবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ অঞ্চলে শীতল পাটির কাঁচামাল নেই। উদ্যোক্তাদের নেত্রকোণার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অধিক দামে কাঁচামাল কিনে আনতে হয়। কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে এই অঞ্চলেই কাঁচামাল চাষের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। পাটি শিল্প এ অঞ্চলের চারদিকে আরও যাতে ছড়িয়ে পড়ে সেই লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবোর্চ্চ সহযোগিতা করা হবে।