সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সহযোগিতায় নরসিংদী'র রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত বালুয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিধিবহিভূতভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ লাভে এমপিওভূক্ত হয়ে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিন জনের মধ্যে ২জন স্বামী-স্ত্রী রয়েছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ ও জেলা শিক্ষা অফিসার জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটা) মো. মাহবুব আলম বিধি মোতাবেক যোগ্যতা না থাকলেও ৬ মাসের ট্রেনিংপ্রাপ্ত সনদ নিয়ে নিয়োগপত্র লাভ করেন ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই। যোগদান করেন ২২ জুলাই।
দু'নম্বরী পথে মাহবুব নিয়োগ লাভের পর রায়পুরার তৎকালীন শিক্ষা অফিসার নার্গিস সুলতানা সাফ জানিয়েছিলেন যে, নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক মাহবুব আলমের কাম্য যোগ্যতা নেই। তার নিয়োগ অবৈধ। তিনি এমপিওভূক্ত হবেন না।
পরে স্কুল কর্তৃপক্ষের অসাধু চক্র মো. মাহবুব আলমের ঋণ পরিশোধ করতে তার স্ত্রী শামীমা বেগমকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর তারিখে 'সহকারী গ্রন্থাগারিক' পদে নিয়োগ দেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ থেকে এমপিওভূক্ত (ইনডেক্স নং- AL- N-1127454) হয়ে ১০নং পে স্কেল কোডে শামীমা বেগম সরকারী বেতন ভাতার অংশ উত্তোলন করে আসছেন। তারও কাম্য যোগ্যতা নেই বলে জানা গেছে।
মো. মাহবুব আলমের শিক্ষাগত সদনেও রয়েছে গড়মিল। তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের বিএ পাশ সনদ জমা দিয়েছেন।
এসকল বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী যারা আছেন তারা কি দেখে এমপিওভূক্ত করেছেন? টাকা দিলে সবই হয়। অভিযোগ করছে, কী হইছে? বেতন পাচ্ছেন তো? এখন এগুলো নিয়ে কোন সমস্যা নাই।
স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন নিজেও অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ । তার প্রথম এমপিওভূক্তির তারিখ ছিল ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি।
এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো মোতাবেক প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. জয়নাল আবেদীনকে নিয়োগ দেয়া সঠিক হয়নি । কারণ, তখন প্রধান শিক্ষক হতে হলে সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ/শ্রেণিসহ সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে কমপক্ষে ৩(তিন) বৎসরের অভিজ্ঞতাসহ শিক্ষকতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যালয়ে ১৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। মো. জয়নাল আবেদীন এর এসব যোগ্যতা নেই।
এব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুন্সি শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলেও শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কিছুই অবগত নই। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি জানার পর ওই কম্পিউটার শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র জানিয়েছেন, অনিয়মের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।