গত দুই বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সরকারের নানা উদ্যোগও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারছে না। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, শাকসবজি, মাছ-মাংসের দাম নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের মধ্যে থাকছে না।
এ অবস্থায় চলমান অনিশ্চয়তা উচ্চ মূল্যস্ফীতি তথা অর্থনীতিতে নতুন করে সঙ্কট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছে অসচ্ছল মানুষ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন টিসিবির কার্ডধারী এক কোটি পরিবার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছেন না।
গত কয়েক দিনের সহিংস ঘটনায় দেশের নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিলো। ফলে রাজধানীর বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে। কারফিউ দিয়ে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়। দুই দিন ধরে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল হতে শুরু করেছে। ফলে রাজধানীর বাজারে পণ্যের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো দুই সপ্তাহ আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি।
দুই বছর ধরে সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার কারণে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ অস্বাভাবিক চাপে পড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো বছরে কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। অন্যদিকে জাতীয় মজুরি হার বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের মতো।
এক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি খারাপ অবস্থায় ছিলো। গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিলো। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা অর্থবছরের সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্য থাকলেও এর ধারেকাছে নেই।
গত কয়েক দিনের সৃষ্ট সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাজারে চাল, ব্রয়লার মুরগি, মুরগির ডিম, মাছ-মাংস, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। অবশ্য গত দুই দিনে শাকসবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বলছেন, বাজার এখনো গরম। দাম এখনো আগের পর্যায়ে আসেনি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি আছে, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। বাড়তি দাম নিয়ে সাধারণ মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছে। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তথা আয় বৃদ্ধির দিকে সরকারকে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তবে গত কয়েক দিনে স্থবির হওয়া সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক করে দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।