অক্টোবর মাসের জন্য দেশের বাজারে প্রতি লিটার এলপি গ্যাসের দাম ১২১ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরমধ্যে কাঁচামাল বিউটেন ও প্রোপেন আমদানিতে জাহাজ ভাড়া ও প্রিমিয়াম খরচ সাড়ে ১৪ টাকার বেশি। মজুদ ও বোতলজাতে প্রতি কেজিতে খরচ ১৬ টাকার বেশি। বাকিটা মূল্যসংযোজন কর, রিটেইলার, ডিস্ট্রিবিউটরের কমিশন।
দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে এই জ্বালানিটির সর্বোচ্চ দাম বাংলাদেশে। বিপণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কাঁচামাল আমদানিতে বাড়তি জাহাজ ভাড়া ও শুল্কই বাড়তি দামের মূল কারণ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের চেয়ে ভারত, নেপাল, ভূটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোতে কমদামে এলপিজি বিক্রি হয়। সেসব বাজারে দামের ওঠানামাও কম দেখা যায়। ভারতে প্রতিকেজি এলপি গ্যাসের দাম ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা, পাকিস্তানে ১০৮ টাকা, ভুটানে ৯২ টাকা ৮২ পয়সা, নেপালে ১১২ টাকা ৬৮ পয়সা এবং শ্রীলংকায় ১২০ টাকা ৪ পয়সা।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের বিক্রয় ও বিপণন প্রধান রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘ইন্ডিয়াতে ৪০ হাজার টনের জাহাজ ডেপ্লয় করে। সেখানে হয়ত ৩০ হাজার টন বিক্রি করল। আমাদের ৯ হাজার বা ১০ হাজার দিয়ে তারা মাদার ভ্যাসেলটাকে ডেপ্লয় করে। সেজন্য এখানে ট্রেডটা বেশি ওঠানামা করে। এবং এটাই মূল কারণ। ট্রেড এবং ডিউটি এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই মূলত দামের পার্থক্য হয়।’
দেশে এলপিজি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাজারে বিপণন হচ্ছে ২০ কোম্পানির সিলিন্ডার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায্য দামে রান্নার এলপি গ্যাস মিললে চাপ কমবে প্রাকৃতিক গ্যাসে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘লাইনের গ্যাস বাসার ব্যবহারে খুব অপচয় হয়। এটা কমাতে চাইলে এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সহজলভ্য করতে হবে।’
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ২৭ থেকে ২৮টি কোম্পানি মিলে নিজেদের খেলায়-খুশি মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করত।’নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি বলছে, বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও ডলার দরের ভিত্তিতে প্রতিমাসে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় হয়।
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ‘ভারতের এলপি মার্কেট অনেক আগে থেকেই বিকশিত। ম্যাচিউর মার্কেট। বাংলাদেশের মার্কেট অতোটা ম্যাচিউর না। আমাদের পুরোটাই আমদানি নির্ভর। সৌদি সিপির ওপর ভিত্তি করে আমাদের দাম ওঠানামা করে।’দেশে বছরে এলপি গ্যাসের চাহিদা ১৬ লাখ টন। ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ যা প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।