বেশ কিছু দিন ধরেই কেনিয়ায় ছাত্র–জনতা আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। অবশেষে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো গতকাল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে আদানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
এই চুক্তি বাতিলের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগ। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিরা গৌতম আদানি ও তাঁর কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ভাতিজা সাগর আদানির বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আদানি গোষ্ঠী অবশ্য এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ‘সম্ভাব্য সব আইনি ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে।
চুক্তি বাতিলের বিশদ
কেনিয়া সরকার আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হওয়া দুটি চুক্তি বাতিল করেছে।
১. জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রকল্প:
-এই প্রকল্পের চুক্তির অর্থমূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।
-এর আওতায় একটি দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণ এবং বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনালের উন্নয়ন করা ছিল।
২. বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের চুক্তি:
-৭৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের এই চুক্তি গত মাসে আদানি গোষ্ঠীর একটি ফার্ম ও কেনিয়ার জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
-এটি ৩০ বছর মেয়াদি সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব (পিপিপি) চুক্তি ছিল।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের বক্তব্য
চুক্তি বাতিলের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো বলেন, ‘পরিবহন এবং জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নতুন তথ্যের আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
রুটোর এই ঘোষণায় পার্লামেন্টে উপস্থিত আইনপ্রণেতারা করতালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। চুক্তি বাতিলের বিষয়ে কেনিয়ার জনগণের মধ্যেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সমালোচনা ও অভিযোগ
চুক্তিগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে কেনিয়ার রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন উঠছিল। বিশেষ করে, এসব চুক্তির অর্থমূল্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছিল। অনেকের অভিযোগ ছিল, চুক্তিগুলো দেশটির স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট রুটো এ বিষয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটান। তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গৌতম আদানি ও তাঁর গোষ্ঠী
গৌতম আদানি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন এসব অভিযোগ নিয়ে কাজ করছে। কেনিয়া সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এসব আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রভাব বলেই ধারণা করা হচ্ছে।