ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির বোঝা শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করছে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)। সংস্থাটি বলছে, বিদ্যুৎ খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে বছরে ১২০ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আইইইএফএ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে।
আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় অনলাইনে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
আইইইএফএর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বার্ষিক ১.৮ গুণ রাজস্ব বৃদ্ধির বিপরীতে বিপিডিবির বার্ষিক ব্যয় বেড়েছে ২.৬ গুণ। এর ফলে সরকারকে এক লাখ ২৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ চাহিদার অর্ধেক জাতীয় গ্রিড থেকে মেটাতে হবে। নতুন করে তিন হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করতে হবে।
এর সঙ্গে বছরে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিতরণে অপচয় ৮ শতাংশের মধ্যে রেখে এই অর্থ বাঁচাতে পারে বিপিডিবি।
প্রতিবেদন বলছে, গত অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা ৬১ শতাংশ। অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার জন্যই বিপিডিবির ভর্তুকির বোঝা ক্রমেই ভারী হয়েছে। দফায় দফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করার পরও ভর্তুকি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা কমাতে বিদ্যুতের চাহিদার প্রাক্কলনে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিতে হবে।
গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক ও আইইইএফএর বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, ‘অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতের রিজার্ভ মার্জিন ৬১.৩ শতাংশ, যা প্রমাণ করে আমাদের মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার জন্যই বিপিডিবির ভর্তুকির বোঝা ক্রমে ভারী হয়েছে। আইইইএফএর প্রস্তাবিত রোডম্যাপে, ভবিষ্যতে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা কমাতে বিদ্যুতের চাহিদার প্রাক্কলনে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের রোডম্যাপে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে নতুন বিনিয়োগ কমিয়ে এনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া শিল্প-কারখানাগুলোকে গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভকেন্দ্র চালানোর বদলে গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক গ্রিডের আধুনিকায়ন ও লোডশেডিংয়ের মাত্রা সীমিত পর্যায়ে আনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ধারাবাহিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ খাতে ভর্তুকির বোঝা কমবে, যা আমাদের মূল্যায়নে উঠে এসেছে।’
আইইইএফএ বলছে, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ২৫ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট হতে পারে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াটের জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হলেও ৩৫ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকবে। এতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ অতিরিক্ত সক্ষমতা ৩৬ শতাংশে নেমে আসবে। আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল এমন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বাদ দিলে এটি হবে ২০ শতাংশ। ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর সঙ্গে এটি তুলনীয় হবে।