ভোজ্যতেলের মতো চিনির বাজারেও দেখা দিয়েছে সংকট। দফায় দফায় দাম বাড়ার পর এবার বাজার থেকে এক রকম 'উধাও' চিনি। দু'একটি দোকানে মিললেও প্রতি কেজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। আবার কোনো কোনো দোকানি শুধু চিনি বিক্রি করতে চাইছেন না, অন্য পণ্য কেনার শর্তে বেচছেন চিনি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, মহাখালী ও মালিবাগসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে চিনির বাজারের এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ভোজ্যতেলের মতো চিনির বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাইফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা মগবাজার এলাকায় না পেয়ে কারওয়ান বাজারে চিনি কিনতে যান। পুরো কারওয়ান বাজার ঘুরে না পেয়ে কিচেন মার্কেটের 'মায়ের দোয়া স্টোর' নামের একটি দোকানে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত কিছু চিনি দেখতে পান তিনি। এ প্রতিবেদকের সামনে দুই কেজি চিনি চাইলে ওই দোকানি সাইফুল ইসলামকে সাফ জানিয়ে দেন, বিক্রি হবে না। কেন বিক্রি হবে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিনির সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে হবে। তাঁদের কিছু নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন, তাঁদের কাছে এসব চিনি বিক্রি করা হবে। চিনি না পেয়ে ক্রেতা সাইফুল বলেন, ব্যবসায়ীরা তেলের মতো চিনির বাজারেও সিন্ডিকেট করেছেন। একের পর এক পণ্য নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রকৃতপক্ষে সংকট রয়েছে কিনা সরকারের উচিত তা তদন্ত করা।
ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, মিল মালিকরা চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী চিনি দিচ্ছেন না। মিলাররা মজুত করে সংকট সৃষ্টি করছেন।
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দেন মিল মালিকরা। তাঁরা জানান, গ্যাস সংকটে ভুগছে চিনি পরিশোধনকারী কারখানাগুলো।
এতে চিনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দিন-রাত মিলিয়ে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি মিল চালানো যাচ্ছে না। এ কারণে উৎপাদন অনেক কমে গেছে। কারও কারও উৎপাদন নেমেছে এক-পঞ্চমাংশে। এ ছাড়া বেশিরভাগ সময় মিল বন্ধ রাখার কারণে তাঁদের পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিলের পাশাপাশি তাঁদের পরিবহনগুলো গ্যাস সংকটে ভুগছে।
পাইকার আর মিলাররা চিনি না ছাড়ার কারণে বাজারে চিনির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান ঢাকার নিউমার্কেটের জনপ্রিয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে চিনির সরবরাহ কমেছে। কিছু কিছু পাইকারের কাছে চিনি পাওয়া গেলেও ৫০ কেজি ওজনের খোলা চিনির বস্তা তাঁরা বিক্রি করছেন ৫ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ২৫০ টাকায়। সেই হিসাবে পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজির কেনা দাম পড়ে ১০৫ টাকারও বেশি। প্যাকেটজাত চিনি একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলো তেলের মতো চিনির বাজারেও কারসাজি করছে বলে মনে করেন তিনি।
মহাখালী কাঁচাবাজারের আল্লাহর দান স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. খোকন বলেন, কিছু প্যাকেট ছিল, বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রি করার মতো এখন খোলা বা প্যাকেট কোনো চিনিই নেই।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের আল-আমিন সরকার বলেন, কিছু চিনি আছে। সেগুলো পাইকারিতে আমরা কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০৫ টাকায় বিক্রি করছেন।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম জানান, কয়েক দিন ধরে বাজারে চিনির সরবরাহ কম। মিলাররা জানিয়েছেন, গ্যাস সংকটের কারণে তাঁরা চিনি উৎপাদন করতে পারছেন না।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'মিলগুলো চরম গ্যাস সংকটে ভুগছে। আগে মিলগুলো ২৪ ঘণ্টাই গ্যাস পেত। এখন ৬ ঘণ্টাও পাচ্ছে না। ফলে দৈনিক যেখানে প্রায় ৩ হাজার টন চিনি উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ করতাম, এখন তা ৫০০ থেকে ৫৫০ টনে নেমেছে।
তিনি বলেন, গ্যাস সরবরাহে সমস্যা থাকায় মাঝপথে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে তেল ও চিনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা।
মুরগির দাম বেড়েছে :এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মুরগির দাম কেজিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।