সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের। তারা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) ও প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রেখে সর্বনিম্ন ১১ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পাবেন। সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফার হার রয়েছে ১২.৫৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিপিএফ মুনাফার হার ছক আকারে স্লাব অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোট তিনটি স্লাব রাখা হয়েছে। তিন স্লাব মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১, ১২ ও ১৩ শতাংশ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জিপিএফ এবং সিপিএফের মুনাফার হার নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব খাত থেকে যারা বেতন পান তারা টাকা রাখেন সাধারণ ভবিষ্য তহবিলে। যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান তারা টাকা রাখেন প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে।
স্লাব অনুযায়ী, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখলে ১৩ শতাংশ হারে মুনাফা মিলবে। ১৫ লাখ এক টাকা থেকে ৩০ লাখ জমা রাখলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১২ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ এক টাকা বা তার বেশি জমা রাখলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১১ শতাংশ হারে।
এতে সিপিএফের বিষয়ে বলা হয়েছে, সব সিপিএফভুক্ত প্রতিষ্ঠানের (স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, করপোরেশন ইত্যাদি) আর্থিক সঙ্গতি একরকম না হওয়ায় সংস্থাগুলোর নিজস্ব আর্থিক বিধিবিধানের আলোকে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের জন্য জিপিএফের স্লাবভিত্তিক মুনাফার হারকে সর্বোচ্চ ধরে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী মুনাফার হার নির্ধারণ করতে পারবে।
সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত পাঁচটি সঞ্চয় কর্মসূচির মুনাফার হার বাড়িয়েছে সরকার। স্কিমের ধরন অনুযায়ী নতুন মুনাফার হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই মুনাফার হার কার্যকর হয়েছে।
মুনাফার হার বাড়ানো পাঁচ স্কিমের মধ্যে রয়েছে- পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিট।
সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের দু’টি ধাপ রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপ সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারী। আর দ্বিতীয় ধাপটি হলো সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপরের বিনিয়োগকারী।
পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা তার কম বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা তার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখা টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা তার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সাড়ে সাত লাখা টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা তার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং সাড়ে সাত লাখা টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা তার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার করা হচ্ছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই মুনাফার হার কার্যকর হবে। ছয় মাস পর জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগের মুনাফার হার আবার নির্ধারণ করা হবে। তবে বিনিয়োগকারী ইস্যুকালীন বিদ্যমান মুনাফার পর বিনিয়োগকালের পূর্ণ মেয়াদে পাবেন।
অর্থাৎ ছয় মাস পর নতুন মুনাফার হার নির্ধারণ করা হলেও জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যে সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, সেই সময় পর্যন্ত এখন যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই হারে মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব এই চারটি স্কিমের মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।