ঢাকা রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১৯ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

মাদারীপুরের মানুষের গড় আয় মাত্র ২৬২ টাকা

অর্থনীতি

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৪:০৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

মাদারীপুরের মানুষের গড় আয় মাত্র ২৬২ টাকা

সারাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় যখন ২ হাাজর ৭’শ ৮৪ ডলার তখন পদ্মাপারের জেলা মাদারিপুরের করুণ চিত্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ হিসাবে দেশের দরিদ্রতম জেলা মাদারীপুর। এখানকার মানুষের গড় মাথাপিছু আয় মাত্র ২.১৫ ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় মাত্র ২৬২ টাকা। 

ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে ২০১৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দৈনিক ২ ডলার ১৫ সেন্ট আয়কে দারিদ্র্যসীমা হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে মাদারীপুরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ বাসিন্দা। অর্থাৎ এখানকার প্রায় সাড়ে ৫৪ শতাংশ বাসিন্দার দৈনিক আয় ২৬২ টাকার কম। এর মধ্যে ডাসার উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা দেশের উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া মাদারীপুরের অন্য সব উপজেলায়ই দারিদ্র্যের হার ৫০ শতাংশের বেশি। আর জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।

বিবিএসের ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর বিআইসিসি সম্মেলন কেন্দ্রে গতকালই এসব তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উপপ্রধান সিমোন লসন পার্চমেন্ট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, বিবিএস ও এসআইডির কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিবিএসের হিসাবে, দারিদ্র্য সবচেয়ে কম নোয়াখালী জেলায়। এ জেলায় দারিদ্র্যের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এ জেলায় সবচেয়ে কম দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলা বেগমগঞ্জ, যার হার মাত্র আড়াই শতাংশ। তবে ঢাকার বাইরের উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দারিদ্র্যপ্রবণ চট্টগ্রামের ডবলমুরিং। সেখানে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ১ শতাংশ। আর বিভাগ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র বরিশালে। সেখানে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে বিবিএসের এ পরিসংখ্যানে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদদের অনেকেই। তাদের ভাষ্যমতে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বড় অংশ ছিল মাদারীপুর জেলার আশপাশের অঞ্চলগুলোকে ঘিরে। সেখানকার জীবনমানে এর বড় প্রভাব পড়ার কথা। তবে এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যদি স্থানীয় জনজীবনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়, সেক্ষেত্রে এর উল্টো প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। আবার এ পরিসংখ্যানে উঠে আসা তথ্য-উপাত্তের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিগত সময়ে সরকারের সুনজরে থাকা জেলার মধ্যে মাদারীপুর একটি। কিন্তু কেন সেখানে বেশি দরিদ্রতার কথা বলা হয়েছে, সেটির কোনো পরিষ্কার ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। সাধারণত উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোয় দরিদ্রতার হার বেশি দেখা যায়। মাদারীপুরের ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ কম থাকা হয়তো একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু তার পরও ডাটাগুলো আরো খতিয়ে দেখা দরকার।’

বিবিএসের হিসাবে, দেশের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার এখনো শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এ হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ঢাকা বিভাগের মধ্যে মাদারীপুরের পর সবচেয়ে বেশি দরিদ্রতা দেখা গেছে নরসিংদী জেলায়। এ হার ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এখানকার বেলাব উপজেলায় দরিদ্রতার হার ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিবিএসের প্রতিবেদনে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর কথা তুলে ধরা হয়। এতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ধনী ও দরিদ্র এলাকাগুলোর মধ্যকার অর্থনৈতিক বিস্তর বৈষম্যের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে সংস্থাটির হিসাবে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা ছিল কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা। সেখানে এবার দরিদ্রতার হার কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৮ শতাংশে।

২০২২ সালে পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দরিদ্রতার ম্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। এতে দেখা যায়, রাজধানীর থানাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র কামরাঙ্গীরচরে। এলাকাটির ১৯ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। আর সবচেয়ে কম পল্টন থানায়। সেখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র ১ শতাংশ। ধানমন্ডিতে দারিদ্র্যের হার দেড় শতাংশ। আর অভিজাত এলাকা গুলশানে এ হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া দারিদ্র্যের হার মোহাম্মদপুরে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, রামপুরায় ৬ দশমিক ৩, বাড্ডায় ৭ দশমিক ৪, বনানীতে ১১ দশমিক ৩ ও মিরপুরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর রাজধানীর অন্যান্য থানা ও সিটি করপোরেশনের বাইরের বিভিন্ন উপজেলাকে যুক্ত করে ঢাকার সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিবিএসের এ প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) পরিচালক প্রফেসর ড. এ কে এনামুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় পর্যায় থেকে নমুনা নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। আগেরবার এর জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল জেলা পর্যায়ে। তাই বিভাগীয় পর্যায়ের ডাটা দিয়ে উপজেলার হিসাব করা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মাদারীপুর এলাকায় নদীভাঙনের প্রভাবে দারিদ্র্য বেশি হতে পারে। তবে আমার কাছে মনে হয় এখনো উপকূলীয় যেসব এলাকায় লবণাক্ততার প্রভাব বেশি, দরিদ্রতার হার সেসব এলাকায়ই বেশি হওয়ার কথা। তথ্য-উপাত্তের এ অসামঞ্জস্যের কারণে বিবিএসের এ প্রতিবেদনে আমি তেমন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না।’

জনপ্রিয়