ঢাকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ২২ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

৮ হাজার কোটি ব্যয় আসেনি এক ফোঁটা তেলও

অর্থনীতি

আমাদের বার্তা, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১০:১৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

৮ হাজার কোটি ব্যয় আসেনি এক ফোঁটা তেলও

মাদার ভেসেল (গভীর সমুদ্রগামী জাহাজ) থেকে কম সময় ও খরচে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাসে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নেওয়া হয়েছিল ৮ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প। ১১ মাস আগে কাজ শেষ হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় এক ফোঁটা তেলও আনা যায়নি। পড়ে আছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা জ্বালানি তেলের স্টোরেজ এবং প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের পাইপলাইন। অবশ্য মাসখানেকের মধ্যে অপারেটর নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সাগরে নৌ-চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় চট্টগ্রামে রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে (ইআরএল) ভিড়তে পারে না জ্বালানিবাহী ট্যাঙ্কার। মহেশখালীর কাছাকাছি গভীর সাগরে নোঙর করা এসব মাদার ভেসেল থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল তাই লাইটারেজে (ছোট জাহাজ) করে আনা হয় ইআরএলে। এতে তেল খালাস ও পরিবহনে সময়ক্ষেপণ যেমন হয়, অপচয়ও হয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ২০১৮ সালে মহেশখালীতে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। জানানো হয়, এটি চালু হলে ১০ থেকে ১২ দিনের পরিবর্তে মাত্র দু’দিনেই মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করা যাবে। বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা।

চীনের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে নির্মাণ করা হয়েছে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার ছয়টি স্টোরেজ। এতে দেশের আড়াই মাসের চাহিদার সমান বাড়তি তেল মজুত করা যাবে। ১৬ কিলোমিটার গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে বয়া। এ ছাড়া স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএল পর্যন্ত সমুদ্র তলদেশ ও স্থল মিলিয়ে টানা হয়েছে ২২০ কিলোমিটারের পৃথক দুটি পাইপলাইন। এ দুই পাইপলাইনের মাধ্যমে মাদার ট্যাঙ্কার থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল মহেশখালী হয়ে সরাসরি ইআরএলে আসার কথা। 
প্রকল্পটির কাজ শেষে গত বছরের মার্চে কমিশনিং করা হয়। এর ৫ মাস পর আগস্টে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। তবে ছয় মাস পার হলেও দেশে এই ধরনের ইনস্টলেশন পরিচালনায় সক্ষম লোকবল না থাকায় অলস পড়ে রয়েছে বিপুল ব্যয়ের স্থাপনাগুলো।

এর মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পটিতে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক তেল খালাস কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সৌদি আরব থেকে আসা একটি জাহাজ থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চেষ্টাও করা হয়। তবে বড় একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে তখন মহেশখালীর স্টোরেজে তেল আনা যায়নি। এর পরপরই সেই ত্রুটি সারানো হলেও পরিচালনা সংস্থা না থাকায় এটি চালু করা যায়নি। অথচ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল টাকা ব্যয় হচ্ছে সরকারের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ করার সঙ্গে সংগতি রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না করায় এত টাকা ব্যয়ের সুফল মিলছে না। এ ধরনের কাজ পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। ফলে সুফল পেতে হলে দ্রুত জ্বালানি খালাস ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। 
বিপিসি ও ইআরএল কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে জাহাজ থেকে তেল খালাস ও সঞ্চালনের কাজটি পেতে আগ্রহী প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ঊর্ধ্বতনরাও ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দিতে আগ্রহী। তবে এটি জি-টু-জি (গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট) ভিত্তিতে করার চেষ্টা চলছে। 

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসপিএম প্রকল্প পরিচালক শরীফ হাসনাত জানান, এসপিএম প্রকল্প পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশীয় অপারেটর না থাকায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। যত দ্রুত সম্ভব অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে তেল খালাস ও সঞ্চালনার কাজ শুরু করা হবে। 
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে এখানে দেশের লোকজনও কাজ করবে। তারা কাজটি রপ্ত করার পর নিজেরাই এটি পরিচালনা করবে। 

জনপ্রিয়