ঢাকা রোববার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

গ্যাসের উৎপাদন কমেছে ৪১ মিলিয়ন

অর্থনীতি

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১১:৫০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

গ্যাসের উৎপাদন কমেছে ৪১ মিলিয়ন

ফেব্রুয়ারি মাসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন (দৈনিক) ৪১ মিলিয়ন (৪ কোটি ১০ লাখ) ঘনফুট কমে গেছে। জানুয়ারি মাসের ৩১ দিনে কমেছিল ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। 

গত ১ জানুয়ারি মোট উৎপাদন ছিল ১৯২৯ মিলিয়ন ঘনফুট, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ১৮৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে গেছে। যা গত ১ নভেম্বর ছিল ১৯৬৮ মিলিয়নে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় প্রতি দিনই কমে আসছে উৎপাদন।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ৭০৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছিল, আর ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির উৎপাদন নেমে এসেছে ৪৮৩ মিলিয়নে। একই সময়ে (জানুয়ারি ২০২০) বহুজাতিক কোম্পানির অধীনে থাকা ৪ গ্যাস ফিল্ড থেকে সরবরাহ পাওয়া যায় ১৬৫৬ মিলিয়ন, যা ১৫ ফেব্রুয়ারি ১১৩৯ মিলিয়নে নেমে এসেছে।

উৎপাদন যখন কমতির দিকে তখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এতে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে থাকা বিশাল ব্যবধান আরও বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদন হ্রাসের এই প্রবণতার পাশাপাশি বড় ধরণের বিপর্যয়ের শঙ্কা বিদ্যমান। সবচেয়ে বড় উৎস বিবিয়ানার মজুদ কমে আসায় যে কোন দিন বড় ঘাটতির মুখে পড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন
দৈনিক ১৮৭০ মিলিয়ন উৎপাদনের দিনে বিবিয়ান গ্যাস ফিল্ড থেকে এসেছে ৯৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৬ সাল নাগাদ গ্যাসক্ষেত্রটির মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে। শঙ্কা সত্যি হলে দেশীয় উৎসের গ্যাসের ১ হাজার মিলিয়ন কমে যাবে।

বিবিয়ানার মজুদ বিষয়ে কোন পক্ষ থেকেই খোলাসা করে কোন তথ্য দেওয়া হয় না। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২-২৩) অনুযায়ী ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে অবশিষ্ট মজুদ দেখানো হয় ১৩৪ বিসিএফ। এরপর বলা হয়েছিল বিবিয়ানার মজুদ ১ টিসিএফ বাড়তে পারে। এরপর ৫৯২ দিন কেটে গেছে।

বিগত সরকার ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানির দিকে ঝুঁকেছিল। তারা আরও দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। বিশেষ আইনে করা ওই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। নতুন করে উন্মুক্ত দরের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। চুক্তির পর ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনে কমপক্ষে ১৮ মাস সময় প্রয়োজন। সে কারণে ২০২৫ ও ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে আমদানি বাড়ানোর পথও বন্ধ রয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, দেশে উৎপাদিত গ্যাসের গড় দর পড়ছে ৬.০৭ টাকার মতো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক-চতুর্থাংশ গ্যাস আমদানি করায় গড় মূল্য ২৪.৩৮ টাকায় পৌঁছে গেছে। যখন এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করতে ত্রাহী অবস্থা, সেই সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন।

ঘাটতি পূরণের অন্যান্য বিকল্পেও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। পেট্রোবাংলার অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির সঙ্গে ডিপিপি অনুমোদনে মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা বিভাগের দীর্ঘ সূত্রিতা অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করছে। একটি ডিপিপি অনুমোদন করতে গেলে কমপক্ষে ২ বছর সময় প্রয়োজন।

আজকের এই গ্যাস সংকটকে বিগত সরকারগুলোর অদূরদর্শিতার ফসল মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

খাদের কিনারে থাকা দেশের গ্যাস সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, বিশেষ করে ২০২৬ সাল নাগাদ মহাবিপর্যয়ের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। এলএনজি আমদানি বাড়িয়ে সামাল দেওয়াকে বিপদজনক বিকল্প হিসেবে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। আকাশচুম্বি দাম যেমন বাধা, তেমনি চাইলেই ইচ্ছামতো আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ নেই। বিদ্যমান দুটি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক গড়ে সর্বোচ্চ ৯০০ মিলিয়ন আমদানি করা সম্ভব।  

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমাদের দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা যদি বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে চাই তাহলে বছরে কমপক্ষে ১০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে। এলএনজি আমদানির প্রয়োজন রয়েছে, তবে এটা সীমিত রাখতে হবে। আমরা যদি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ দিতে চাই তাহলে এ খাতে আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারে। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই জটিল।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, খুব দ্রুততার সঙ্গে নতুন কূপ খনন করা, পুরাতন কূপগুলো সংস্কার করে উৎপাদন বাড়ানো এবং বিবিয়ানা কূপ থেকে ৭০ মিলিয়ন পর্যন্ত উৎপাদন করছে, বেশি রিজার্ভ থাকার পর রশিদপুর ও তিতাস গ্যাস ফিল্ডের কূপ দিয়ে অনেক কম (১০ থেকে ২৫ মিলিয়ন) সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। সেখানেও মনযোগ দেওয়া দরকার।

তিনি বলেন, দৈনিক ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে এরমধ্যে প্রায় ১০ শতাংশের মতো সিস্টেম লস হচ্ছে, অর্থাৎ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। যদিও কিছু কারিগরি লোকসান থাকা স্বাভাবিক তবে ১০ শতাংশ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সিস্টেম লস বিবেচ্য হতে পারে।

ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বহুকাল থেকে বিবিয়ানার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে গিয়ে এর উৎপাদনে ধস নামতে পারে। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা আমলে নেওয়া হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে কতগুলো কাজ করা দরকার ছিল সেগুলো করা হয় নি। ছাতকে ১ টিসিএফ গ্যাস রয়েছে সেখান থেকে গ্যাস আনা দরকার। 

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, দীর্ঘ সূত্রিতা এড়াতে ডিপিপি না করে কোম্পানির অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এতে করে উৎপাদন বাড়বে।

ভোলায় দু'টি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। গ্যাসের চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে। ওই এলাকা থেকে এলএনজি আকারে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনতে চায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

অন্যদিকে বেগমগঞ্জ-৪ ও সিলেট-১০ নম্বর কূপে গ্যাস রেডি থাকলেও পাইপলাইন অভাবে উত্তোলন করা যাচ্ছে। সিলেট-১০ এ সওজের অনুমতি পেতে বিলম্ব এবং বেগমগঞ্জে স্থানীয়দের বাধায় পাইপলাইন নির্মাণ বন্ধ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ১১৩ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে ৯৯টির মতো। এর মাধ্যমে ২৯টি গ্যাসফিল্ড আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। মোবারকপুর ও কসবার মতো কয়েকটি ফিল্ডে গ্যাসের উপস্থিতি পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয় নি। বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদন্ড বিবেচনা করা হয়। সঙ্গত কারণে দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। 
 

জনপ্রিয়