
ঈদকে সামনে রেখে বরিশালে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। বিলাসবহুল শপিংমল আর দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। সেইসঙ্গে ক্রেতাদের অভিযোগ, দামও বেড়েছে পোশাক-আশাকের। অন্যবারের চেয়ে এবার বরিশালে বেড়েছে অনলাইন শপিং। বিক্রেতারা বলছেন, অনলাইননির্ভর কেনাকাটায় এবার কিছুটা বেচাবিক্রিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে, ফুটপাতে কম দামে চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটা করে খুশি ক্রেতা সাধারণ।
এদিকে, ঈদকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে নগরীর শপিংমলসহ গীর্জা মহল্লা, চকবাজার, বাজার রোডের বিভিন্ন দোকানগুলোতে ভিড় জমেছে ক্রেতাদের পছন্দের পোশাক ও পশরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরাও। ক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটি থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেষমুহূর্তে সবার জন্য পছন্দের জামা কাপড় কিনছেন তারা। তবে আগের চেয়ে জামা কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি বলেও অভিযোগ তাদের।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক খান মোহাম্মদ আল আমিন জানান, এবার শেষমুীর্তে ঈদের বেতন-বোনাস পেয়েছি।
শিক্ষকদের জন্য শুক্রবার ব্যাংক খোলা। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শপিংয়ে এসেছি। পরিবারের সবার পছন্দ অনুযায়ী, কেনাকাটার চেষ্টা করছি। তবে সবকিছুর দাম অনেকটাই বেশি মনে হচ্ছে। তাছাড়া পছন্দসই জিনিসও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন হলে ঈদের বাজেট নিয়ে কিছুটা হলেও হিমশিম খেতে হবে।
লায়লা পারভীন নামে এক ক্রেতা জানান, একটা পাকিস্তানের ড্রেস কিনতে মার্কেটে এসেছিলাম। সমস্ত মার্কেট ঘুরেও পছন্দমতো পোশাক পাওয়া যায়নি। যাও পাওয়া যায়, তার দাম আকাশছোঁয়া। বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করেছি। চিন্তা করছি, নিজের পছন্দের পাকিস্তানি ড্রেস অনলাইনে অর্ডার করবো। মার্কেটে এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি।
এদিকে, গ্রীষ্মের গরমকে মাথায় রেখে এবারের ঈদে ছেলের প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি ও শার্ট আর মেয়েদের পছন্দের তালিকায় আছে পাকিস্তানি সালোয়ার-কামিজ, নায়রা, সারারা, গারারা গাউন, ত্রিপিসসহ সুতির শাড়ি। বিক্রেতারা জানান, অনলাইনে জামা কাপড়ের বেচাবিক্রি বাড়ায় এবার কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবে শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে।
রফিক নামে এক বিক্রেতা জানান, প্রথমদিকে ক্রেতাদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও রমজানে শেষে এসে অনেক চাপ বেড়েছে। তবে অনলাইননির্ভর মার্কেটের কারণে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সবাই ছবি তুলে নিয়ে আসেন এবং সেই ড্রেসটি সরাসরি কিনতে চান। তিনি বলেন, অনলাইনের সঙ্গে বাস্তবে মার্কেটের তো অনেক তফাৎ রয়েছে। তাই, এবার বেচাবিক্রি নিয়েও কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে, তাতেই মনে হচ্ছে বেচাবিক্রি ভালো হবে।
বেড়েছে ফুটপাতের দোকানে কেনাকাটাও
নগরীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের মার্কেট হিসেবে পরিচিত মহসিন মার্কেট, সিটি মার্কেটসহ ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। কম টাকায় পছন্দের পোশাক কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা আর বেচাবিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।
সোনিয়া নামে এক ক্রেতা জানান, বাসায় কাজ করে ছেলেমেয়েদের জন্য ৫ হাজার টাকা জমিয়েছি, সেই টাকা দিয়েই সবাইকে শপিং করে দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের পছন্দের জামাকাপড় দুই হাজার টাকায় হয়ে গেছে। বাকি তিন হাজার টাকা দিয়ে নিজে এবং স্বামীর জন্য কেনাকাটা করবো। সোহেল নামে এক বিক্রেতা জানান, দুইশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আটশ টাকার মধ্যে জামাকাপড় বিক্রি হচ্ছে। সবাই পছন্দ অনুযায়ী, কাপড় কিনছেন। বেচাবিক্রি জমে উঠেছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি শেখ আব্দুর রহমান বলেন, রমজানের শেষে ক্রেতা সমাগম বাড়ায় চারশ কোটি টাকার বেশি বেচাবিক্রি হবে বলে আশা করছি। প্রতিটি দোকানে যেভাবে ভিড় বাড়ছে, এতে এমনটা আশাই করা যায়।
কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। প্রতিটি জায়গায় বসানো হয়েছে, চেকপোস্ট। সকাল আটটা থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রতিটি মোড়ে পুলিশ শক্ত অবস্থানে আছে। রাতে পুলিশ সদস্যদের টহল আরো বাড়বে।
প্রসঙ্গত, বরিশার নগরীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক জামা-কাপড়ের দোকান রয়েছে।