
বিদ্যমান শিল্প পাবে কম দামে আর নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের বাড়তি দর চুড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দর ঘোষণা করা হবে। বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ঠিক কী পরিমাণ দাম বাড়ানো হবে সে বিষয়ে কোনোধ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি বলেছেন, বিদ্যমান শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ছে না। তারা বর্তমান দরেই গ্যাস পাবে।
বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে, শিল্প গ্রাহকরা বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিল দিচ্ছে ৩০ টাকা দরে। এখন যেসব শিল্প চালু রয়েছে তারা এই দরেই গ্যাস পাবে। আর নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে বিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হতে পারে।
বিদ্যমান গ্রাহকদের দর (শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা) অপরিবর্তিত রেখে নতুন ও প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল পেট্রোবাংলা। প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। অন্যদিকে নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করা।
পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। পেট্রোবাংলা তাদের প্রস্তাবে বলেছে, দাম না বাড়ালে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। পেট্রোবাংলার সেই প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শুনানিতেও ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা তীব্র আপত্তি তোলেন। বিশেষ করে শিল্পে দুই ধরণের দর করার বিরোধীতা করেন সকলেই।
শুনানিতে অনেকেই শিল্পে দুই ধরণের দরের বিষয়ে আপত্তি করেন। তারা বলেছেন, বিদ্যমান শিল্প বিদ্যমান দরে, আর নতুন শিল্পের জন্য বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হলে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেছেন, গণশুনানিতে আমরা হিসেব করে দেখিয়ে দিয়েছি দাম কমানো যায়। বিগত সরকার যেসব লুন্ঠনমূলক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বাড়ানো হলে ভোক্তাদের সুরক্ষা না দিয়ে সেই লুন্ঠনমূলক ব্যয়ের অভিযোগের দায়ভার তারা কাঁধে তুলে নিলেন বলে প্রমাণিত হবে।
একই দেশে শিল্পে দুই ধরণের দর আইনের দৃষ্টিতে অচল। তাই চ্যালেঞ্জ করার কথাও জানান তিনি।
পেট্রোবাংলা কয়েকটি উৎস থেকে গ্যাস কিনে থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কেম্পানি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিকে প্রতি হাজার ঘনফুটের দাম দেওয়া হয় ২৮ টাকার মতো, আর বাপেক্সকে দেওয়া হয় ১১২ টাকার মতো। দেশের খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম দেওয়া হয় ২.৭৬ ডলার, আর টাল্লোকে দেওয়া হয় ২.৩১ ডলার।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম ১০.৬৬ ডলার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.০৯ ডলার। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কয়েক দশকের স্থবিরতার কারনে আমদানির দিকে যেতে হয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিত আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।