মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে বৃহস্পতিবার এসএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দিতে হয়েছে সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিক নামের দুই ভাইকে। পরীক্ষা শেষে দুই ভাই বাড়িতে ফিরে মায়ের মরদেহ দাফনে অংশ নেন। মর্মস্পর্শী এ ঘটনাটি ঘটেছে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের জোলাগাতী গ্রামে।
সাইফুল ও আসাদ ওই গ্রামের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মল্লিকের ছেলে। তারা দুই ভাই জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়ীয়া নূরজাহান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ভাণ্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তারা দুই ভাই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে বৃহস্পতিবার পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছেন তারা।
পরিবার ও স্থানীয় জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থতাসহ নানান ধরেনের সমস্যায় ভুগছিলেন সাইফুল ও আসাদের মা শাহানা বেগম (৫৫)। তিনি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই রাতেই তাকে পিরোজপুর সদর ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ভেঙে পড়েন এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই ভাই সাইফুল ও আসাদ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মায়ের লাশের পাশে বসে থাকে দুই ভাই। স্বজনেরা তাদের নানাভাবে মা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেন। পরে স্বজনদের কথায় মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যান দুই ভাই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে তারা বের হয়ে মায়ের জানাজার জন্য বাড়িতে আসে। দুপুরে জানাজার নামাজের পর মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়।
কেন্দ্র সচিব ও ভাণ্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহমুদ চৌধূরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিকের মৃত্যুর সংবাদটি খুবই মর্মান্তিক। আমি ও তাদের কক্ষের পর্যবেক্ষক কেন্দ্রে তার খোঁজখবর রেখেছি। পরীক্ষার কক্ষে মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। সহপাঠীরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে পরীক্ষা ভালো হয়েছে তাদের।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাইফুল ও আসাদকে সান্ত্বনা দিয়েছি। তাদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন।