ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

স্কুলের সভাপতি ছিলেন সেলিম খান, জাল সনদে নিয়োগ দেন যুবলীগ নেতা কাউছারকে

শিক্ষা

আমাদের বার্তা ,চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

স্কুলের সভাপতি ছিলেন সেলিম খান, জাল সনদে নিয়োগ দেন যুবলীগ নেতা কাউছারকে

চাঁদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ফলে সদরের বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল সনদে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে নিয়োগ পান লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ কাউছার খান।

ওই বিদ্যালয়ের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন দীপু মনির ‘টাকার মেশিন’ বালু খেকো খ্যাত সেই সময়ের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ওই বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়াতে আছেন ওই কাউছার।বিদ্যালয়ের ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে প্রার্থী ছিলেন এমন একজন কাউছার সম্পর্কে এমন তথ্য দেন।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে সাবেক নাম ‘বহরিয়া নূরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়’। এর বর্তমান নাম ‘বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’। এ বিদ্যালয়ে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে খণ্ডকালীন পদে থাকা মুহাম্মদ কাউছার খান (ডিগ্রি পাস) আবেদন করেন। পরে তাকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের  ৫ অক্টোবরের মধ্যে ওই পদে যোগদান করার জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মকবুল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।

‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে নিয়োগ পাওয়া মুহাম্মদ কাউছার খান ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় এ পদে যোগদান করলাম বলে চিঠি দিলে একই দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর করে যোগদান গৃহীত হয়েছে বলে চিঠি গ্রহণ করেন।

তিনি আরো বলেন, পরে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হলেও এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে যায়, কিন্তু কাউছারের এমপিও (ইনডেক্স) হয় না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে জাল সনদ দেওয়ায় তার নাম এমপিওভুক্ত হয়নি। প্রায় দুই বছর পর চক্রের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে তার নাম এমপিওভুক্ত হয়।  

তার জাল সনদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউছার বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর। তার এমপিও হয়-২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল। ইএমআইএস পোর্টালে মুহাম্মদ কাউছার খান নামে জাল সনদ দেখায়। তার ইনডেক্স নম্বর: ১০১২৮৩৪৯৫, এমপিও প্রতিষ্ঠান বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (০৭০১১৯১৩০১), স্তর মাধ্যমিক, ডকেট নম্বর: ২০২১৪৮১৮১৬-৩৯৬৬, এমপিও কোড: ০৭০১১৯১৩০১।

এ বিদ্যালয়ের একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী জানান, কাউছার খান ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে চাকরি করলেও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সেলিম খান ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আছেন। বিদ্যালয়ে অনিয়মকে তিনি নিয়মে পরিণত করেছেন। কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করেছেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম খানের হামলা-মামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি।  

বিদ্যালয়ের ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে থাকা মুহাম্মদ কাউছারকে ‘জাল সনদ’ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি সঠিক কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। সরাসরি কথা বলব। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি যে পদে আছেন, তাতে ক্লাস নিতে পারেন না। কীভাবে আপনি ক্লাস নেন? তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্লাস করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে বলেন, আমাকে যুবলীগের পদ দিয়েছে, কিন্তু আমি নিতে চাইনি।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মুকবুল হোসেন বলেন, ওই সময়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি সেলিম খান ছিলেন প্রভাবশালী। তার নির্দেশে মুহাম্মদ কাউছার খানের নিয়োগ হয়েছে। আমি তার সনদপত্র উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে পাঠানোর পরে জানতে পেরেছি সনদপত্র জাল। যে কারণে এসব কাগজপত্র আর কুমিল্লায় পাঠাইনি। পরে কাউছার তার কাগজপত্র তদবির করে অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে এমপিও করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। এরপর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। তার বিষয়ে আমার কাছে আর কোনো তথ্য নেই।

বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ইমান হোসেন বলেন, আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে কাউছার খানের নিয়োগ হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে তিনি ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদের হলেও শিক্ষক কম থাকায় ক্লাস নিয়েছেন। এখন আমরা এনটিআরসি থেকে তিনজন শিক্ষক পেয়েছি। তাকে আর ক্লাস করতে হবে না।

চাঁদপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আর এসব নিয়োগ দিয়েছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। তারপরও আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমরা গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

সেলিম খানকে বলা হতো দীপু মনির টাকার মেশিন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেলিম খান চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন। এসব ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। দুদকে তার নামে ছিল মামলা।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর নিজ এলাকা থেকে পালানোর সময় গণপিটুনিতে নিহত হন সেলিম খান ও তার ছেলে চিত্রনায়ক শান্ত খান।

জনপ্রিয়