বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একেকটিতে একেক রকম টিউশন ফি নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের ওপর অনেকটা জোর করেই এই ফি চাপিয়ে দেয়া হয়। এতে চাপ পড়ে অভিভাবকদের ওপরও। তাই টিউশন ফি এর লাগাম টানতে এবার নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে থাকা নীতিমালার খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মহানগরগুলোতে এমপিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতি টিউশন ফি বা টিফিনসহ মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। বছরের হিসাবে এ ফি দাঁড়ায় ১ হাজার ৮‘শ টাকা। আর ননএমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাসিক বেতন নির্ধারণ হয়েছে ২০০ টাকা। বছরে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
বেতনের বাইরে এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের স্কুল স্তরে এককালীন মোট বার্ষিক ফি ৩ হাজার ১১৫ টাকা। ননএমপিও প্রতিষ্ঠানের জন্য স্কুল স্তরে এই ফি ৪ হাজার ৮২৫ টাকা।
আর ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে এমপিও ও ননএমপিও উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য অভ্যন্তরীণ ৩ ঘণ্টার প্রতি বিষয়ের পরীক্ষা বাবদ ৪০ টাকা ও ৩ ঘণ্টার কম সময়ের জন্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কলেজ পর্যায়ের (একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতক পাস) এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহানগর এলাকায় এককালীন বার্ষিক ফি হবে ৪ হাজার ৬১০ টাকা আর ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী প্রতি বছরে এককালীন গুণতে হবে ৫ হাজার ৩৩০ টাকা। এমপিও ও ননএমপিও উভয় স্তরের কলেজে অভ্যন্তরীণ ৩ ঘণ্টার প্রতি বিষয়ের পরীক্ষা বাবদ ৫০ টাকা ও ৪ ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কলেজ স্তরের মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়নি। কলেজ স্তরের মাসিক বেতন নির্ধারণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কমিটিকে দেয়া হয়েছে।
নীতিমালার খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ আদায়ের হার অনুসারে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জন্য বার্ষিক এককালীন সিলেবাস ও অগ্রগতি প্রতিবেদন ফি ২০০ টাকা, টিফিন ফি ১৫০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ৭৫ টাকা, ক্রীড়া ফি ১৫০ টাকা, সাংস্কৃতিক ফি ৭৫ টাকা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে ৭৫ টাকা, ক্লাব গঠনে ২৫ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২০ টাকা, ল্যাব ফি ৪০ টাকা, কল্যাণ তহবিলে ২৫ টাকা, আইসিটি ফি ২৪০ টাকা, বাগান খাতে ৬০ টাকা, কমনরুম ফি ৩০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৫০ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় ৫০ টাকা, নবীনবরণ বা বিদায়ের জন্য ৫০ টাকা, চিকিৎসাসেবা ১০ টাকা, বিবিধ ফি ৫০ টাকা দিতে হবে। আরো দিতে হবে উন্নয়ন ফি ২০০০ টাকা, বিদ্যুৎ ফি ৩০ টাকা, শিক্ষাসফরের জন্য ৫০ টাকা, সাঁতার প্রশিক্ষণে ১০ টাকা। এছাড়াও স্কাউটস, গার্ল গাইড, বিএনসিসি ও রেডক্রিসেন্ট ফি দিতে হবে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত হারে।
মাধ্যমিকের নন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির জন্য বার্ষিক এককালীন সিলেবাস ও অগ্রগতি প্রতিবেদন ফি ২৫০ টাকা, টিফিন ফি ১৫০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ৭৫ টাকা, ক্রীড়া ফি ২৫০ টাকা, সাংস্কৃতিক ফি ৭৫ টাকা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে ৭৫ টাকা, ক্লাব গঠনে ২৫ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২০ টাকা, ল্যাব ফি ৪০ টাকা, কল্যাণ তহবিলে ২৫ টাকা, আইসিটি ফি ৩০০ টাকা, বাগান খাতে ৬০ টাকা, কমনরুম ফি ২০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৭৫ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় ৫০ টাকা, নবীনবরণ বা বিদায়ের জন্য ১০০ টাকা, চিকিৎসাসেবা ১০ টাকা, বিবিধ ফি ৫০ টাকা দিতে হবে। আরো দিতে হবে উন্নয়ন ফি ৩০০০ টাকা, বিদ্যুৎ ফি ৩০ টাকা, শিক্ষাসফরের জন্য ৫০ টাকা, সাঁতার প্রশিক্ষণে ১০ টাকা। এছাড়াও স্কাউটস, গার্ল গাইড, বিএনসিসি ও রেডক্রিসেন্ট ফি দিতে হবে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত হারে। এসবের বাইরে নন এমপিও প্রতিষ্ঠানে আরো দিতে হবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাবদ ১৫০ টাকা ও মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০ টাকা।
এমপিওভুক্ত কলেজে (একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতক পাস) বার্ষিক এককালীন সিলেবাস ও অগ্রগতি প্রতিবেদন ফি ২০০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ১০০ টাকা, ক্রীড়া ফি ২০০ টাকা, সাংস্কৃতিক ফি ৭৫ টাকা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে ৭৫ টাকা, ক্লাব গঠনে ২৫ টাকা, লাইব্রেরি ফি ১০০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ১০০ টাকা, ল্যাব ফি ৫০ টাকা, কল্যাণ তহবিলে ৫০ টাকা, আইসিটি ফি ২৪০ টাকা, কমনরুম ফি ৫০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৭৫ টাকা, ভূমি কর, বিদ্যুৎ ও পানি ২৫ টাকা, ছাত্র সংসদ ফি ৫০ টাকা, উন্নয়ন ফি ৩০০০ টাকা, বিবিধ ৫০ টাকা, চিকিৎসাসেবা ১০ টাকা, শিক্ষাসফর ৫০ টাকা, নবীনবরণ বা বিদায়ের জন্য ৭৫ টাকা, সাঁতার প্রশিক্ষণ ১০ টাকা।
এছাড়াও রোভার, গার্ল গাইড, বিএনসিসি ও রেডক্রিসেন্ট, ভেঞ্চার ও অধিভুক্তি ফি দিতে হবে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত হারে। পরিবহন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ফি নির্ধারণ করছে একাডেমিক কাউন্সিল।
নন এমপিও কলেজে (একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতক পাস) বার্ষিক এককালীন সিলেবাস ও অগ্রগতি প্রতিবেদন ফি ২০০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ৩০০ টাকা, ক্রীড়া ফি ৩০০ টাকা, সাংস্কৃতিক ফি ৭৫ টাকা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে ৭৫ টাকা, ক্লাব গঠনে ২৫ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ১৫০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ১০০ টাকা, ল্যাব ফি ৬০ টাকা, কল্যাণ তহবিলে ৫০ টাকা, আইসিটি ফি ৩০০ টাকা, কমনরুম ফি ৫০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৭৫ টাকা, ভূমি কর, বিদ্যুৎ ও পানি ২৫ টাকা, ছাত্র সংসদ ফি ৫০ টাকা, উন্নয়ন ফি ৩০০০ টাকা, বিবিধ ৫০ টাকা, চিকিৎসাসেবা ১০ টাকা, শিক্ষাসফর ৫০ টাকা, নবীনবরণ বা বিদায়ের জন্য ৭৫ টাকা, সাঁতার প্রশিক্ষণ ১০ টাকা।
এছাড়াও রোভার, গার্ল গাইড, বিএনসিসি ও রেডক্রিসেন্ট, ভেঞ্চার ও অধিভুক্তি ফি দিতে হবে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত হারে। পরিবহন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ফি নির্ধারণ করছে একাডেমিক কাউন্সিল। নন এমপিও কলেজে অতিথি শিক্ষক ফি দিতে হবে ৩০০ টাকা।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ধরন, অভিভাবকদের সামাজিক শ্রেণির বিবেচনায় রেখে মাসিক বেতন ও টিউশন ফি‘র পরিমাণ নির্ধারিত হবে। মহানগর ও জেলা কমিটির নির্ধারণ করা মাসিক বেতন-টিউশন ফি সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত-সার প্রতিবেদন কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। টিউশন ফি নির্ধারণে এলাকা ভিত্তিক কমিটি থাকবে।
মহানগর পর্যায়ের কমিটির সভাপতি থাকবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক।
এছাড়াও সদস্য থাকবেন আরো ছয়জন। এর মধ্যে রয়েছেন- সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মনোনীত প্রতিনিধি একজন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক উপপরিচালক। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড মনোনীত এমপিওভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষ, ননএমপিও কলেজের একজন অধ্যক্ষ, এমপিওভুক্ত স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষক, ননএমপিওভুক্ত স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এই কমিটিই মহানগরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি প্রস্তাব করবে।
কমিটির কর্মপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য কমিটির আওতাভুক্ত এলাকার এমপিও-ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাসিক বেতন-টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক টিউশন ফি বা মাসিক বেতন নির্ধারণ করতে হবে। তবে কাজের সুবিধার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ধরন, অভিভাবকদের সামাজিক শ্রেণির বিবেচনায় রেখে মাসিক বেতন-টিউশন ফি‘র পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক প্রযোজ্য করবে।
দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের ফুল ফ্রি বা হাফ ফ্রি বিষয়টি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কমিটি দেখবে। নির্ধারণকৃত মাসিক বেতন-টিউশন ফি‘র বাস্তবায়ন এই কমিটি মনিটর করবে।
এ ছাড়াও সদস্য সচিব এই টিউশন ফি নির্ধারণ খসড়া প্রস্তাব কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন। কমিটির সভায় মাসিক বেতন-টিউশন ফি চূড়ান্ত করে কমিটির সব সদস্যদের স্বাক্ষর করতে হবে।
কমিটির সদস্য সচিবকে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী বেতন-টিউশন ফি বিবরণ সংরক্ষণ করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের দেয়া ছকে জেলা- উপজেলা, প্রতিষ্ঠানের নাম, ইআইআইএন নম্বর, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ও শ্রেণিওয়ারি মাসিক বেতন ও টিউশন ফি‘র (টাকা) তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ১ম থেকে একাদশ শ্রেণি।
হিসাব সংরক্ষণ যেভাবে: মাসিক বেতন-টিউশন ফি নির্ধারিত খাতের ব্যাংকে হিসাব খুলে রাখতে হবে। কোনো একক খাতে বাৎসরিক আদায় ১০ লাখ টাকার অধিক হলে এই খাতের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। আদায় করা অর্থখাত ভিত্তিক ব্যয় করতে হবে। এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। সব আদায় ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
হিসাব নিরীক্ষা যেভাবে: টাকা আদায় ও অর্থ ব্যয় নিরীক্ষাযোগ্য হবে। হিসাব সংরক্ষণের সাধারণ নীতিমালা ও পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃথক খাতভিত্তিক হিসাব রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি পঞ্জিকাবর্ষে ২ বার (জুন ও ডিসেম্বর) ক্যাশ বই ও ব্যাংক বিবরণী সমন্বয় করতে হবে। সব হিসাবপত্রের সফটকপি এবং হার্ডকপি নূন্যতম ২০ বছর সংরক্ষণ করতে হবে। দায়িত্ব হস্তান্তরকালে প্রতিষ্ঠান প্রধান দায়িত্ব গ্রহণকারী শিক্ষককে লিখিতভাবে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই জারি করা ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে আয়-ব্যয়ের নতুন খাত সংযোজন/বিয়োজন/পরিবর্তন করতে পারবে।
এদিকে বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন খাতে কত টাকা ধরা হয়েছে তার তালিকাসহ দেয়া হয়েছে।