ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

এক স্কুল তিনবার বিলীন পদ্মায়, এখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস

শিক্ষা

আমাদের বার্তা, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

এক স্কুল তিনবার বিলীন পদ্মায়, এখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস

শরীয়তপুরের জাজিরায় তিন দফায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সবশেষ এক মাসের বেশি সময় আগে ভাঙনের মুখে উপজেলার পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে যায়।

এরপর থেকে একটি জরাজীর্ণ টিনশেড ও খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। স্থানীয়রা জানান, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে জাজিরার পদ্মাতীরের নাওডোবা পাইনপাড়া এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন পাইনপাড়া এলাকাটি নদীর দক্ষিণ তীরে ছিল। পরে কয়েক দফায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে এলাকাটি এখন পদ্মা নদীর মাঝামাঝি স্থানে একটি চরে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য বলছে, বিদ্যালয়টি প্রথমবার ভাঙনের কবলে পড়ে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। দ্বিতীয় দফায় ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ভাঙনের কারণে এটির জমি ও অবকাঠামো পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে চরপাইনপাড়ায় ৩৩ শতাংশ জমির ওপর পাঁচটি কক্ষ নির্মাণ করে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। শিক্ষকরা জানান, গত বর্ষায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে প্রথমে বিদ্যালয়ের মাঠটি বিলীন হয়।

এরপর ৫ অক্টোবর বিদ্যালয়টির টিনশেড ঘর ভাঙনের কবলে পড়লে তা সরিয়ে নেয়া হয়। ওই সময় নদীর দক্ষিণ তীরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি খালি জমিতে বিদ্যালয়ের জিনিস ও আসবাবপত্র স্তূপ করে রাখা হয়। ওই সময় টানা ২০ দিন বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিলো। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পদ্মা নদীর মাঝে অবস্থিত চরপাইনপাড়া এলাকার। এখন সেটি অস্থায়ীভাবে চালু হয়েছে নদীর দক্ষিণ তীরের নাওডোবা এলাকায়।

ফলে নৌকায় করে পদ্মার প্রায় দুই কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দিয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। নদী পারাপারের ভয়ে প্রাক্‌-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকেরা।

সম্প্রতি পদ্মা সেতু প্রকল্পের নাওডোবা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা একটি খালি জমিতে নদী ভাঙনের শিকার কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে একটি মাদরাসার রান্নাঘরের বারান্দা ও খোলা আকাশের নিচে।

রোদের মধ্যে বসেই পড়ালেখা করছে শিশুরা। পাশে একটি নলকূপ থাকলেও কোনো শৌচাগার নেই। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৪০ শিক্ষার্থীকে পাঠ কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়।ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির হলেও সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে রেখে পাঠের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

শারমিন আক্তার ও মেহেদী হাসান নামে বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানান, তারা সাঁতার জানে, তবু নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে ভয় লাগে। প্রতিদিন সকালে পদ্মা পাড়ি দিয়ে নাওডোয় গিয়ে ক্লাস শেষে বিকালে গ্রামে ফিরে যায় তারা।

এদিকে, অবকাঠামো না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মিয়া। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি নেই, ভাবতে পারছি না। সামনে শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এই বিবেচনায় খোলা আকাশের নিচে শ্রেণির কার্যক্রম চালাচ্ছি। স্কুলটা কোথায় নিয়ে চালু করা হবে, কে আমাদের জমি দেবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্কুলটির অবস্থা জানিয়েছি। তারা আসেননি বলে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও দিতে পারিনি।

বিদ্যালয়টি পরিদর্শন না করার কথা অকপটে স্বীকার করেন জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ামত হোসেন।

তিনি বলেন, আমি শুনেছি, একটি স্কুল নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। সেটি দেখতে যেতে পারিনি। স্কুলটির শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ কি না, তাও বলতে পারবো না।
জাজিরা উপজেলার ইউএনও কাবেরী রায় বলেন, আমি জাজিরায় যোগদান করেছি তিন সপ্তাহ হলো। কোন স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে, তা কেউ আমাকে জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখবো বিদ্যালয়টির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়। সূত্র: বিডিনিউজ 

জনপ্রিয়