ফিরেছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাজার দু্য়েক। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে দশ হাজার। সবাই বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হওয়ায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে তারা ফিরতে শুরু করেন। বর্তমানে অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ফিরে অধ্যয়নে মনোযোগী হয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেপালী। তারপর ভারতের কাশ্মীরসহ বিভিন্ন প্রদেশের। সুদূর আফ্রিকা থেকেও বাংলাদেশে পড়তে আসেন শিক্ষার্থীরা। আছেন পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভুটান, চীন, নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন ও সোমালিয়াসহ ৩৭টি দেশের শিক্ষার্থীরা।
কারণ, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয় তুলনামূলক কম। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। মূলত এসব কারণে তারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু জুলাইয়ে আন্দোলন শুরুর পর তাদের এবং তাদের পরিবারের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, আমরা আন্দোলনের আগে বা পরে কোনো ধরনের সমস্যার মুখে পড়িনি। তবে আন্দোলন চলাকালে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করায় এবং ঢাকার পরিস্থিতির কারণে দেশে চলে গিয়েছিলাম। পরে ক্লাস শুরু হলে আবার ফিরে আসি। আমাদের সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
বর্তমানে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোয় ২ হাজার ৭৯০টি আসন এবং সরকারি ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজ ও নয়টি ডেন্টাল কলেজে ২২১টি আসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। সে হিসাবে প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার বিদেশী শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বেসরকারিতে এমবিবিএস কোর্সে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৪২৭ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৭৩৭, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৯৭০ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রায় দুই হাজারের অধিক এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
বারডেম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমা হক বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ২০ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই আমরা কিছুটা দেরিতে ক্লাস শুরু করেছিলাম। ক্লাস শুরুর পর প্রথম দিন থেকেই আমাদের সব বিদেশি শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মতিউর রহমান গণমাদ্যমকে বলেন, আমাদের সব কলেজের বিদেশি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টিতে ৬৭০ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নরত ১ হাজার ২৮৭ বিদেশি শিক্ষার্থী। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ১৯১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নেপালি শিক্ষার্থী শুবনারায়ণ ইয়াদাভ কলেন, আন্দোলনের সময় যদিও অনেক নিরাপত্তার বিষয় ছিলো, কিন্তু আমরা কোনো সমস্যার মুখে পড়িনি। হল প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে আমরা নিরাপদে ছিলাম। আমিসহ আমাদের অনেক সহপাঠী ক্যাম্পাসের হলেই ছিলাম। শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলন পূর্ববর্তী সময় থেকে বর্তমান বাংলাদেশ ভালো হয়েছে; কিন্তু আশানুরূপ হয়নি। তবে বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়।