ঢাকা সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

আইসিটি বিষয়ের আধুনিকায়নে বিশেষ গুরুত্ব 

নিজস্ব ফন্টে পাঠ্যবই ছাপবে এনসিটিবি

শিক্ষা

সাবিহা সুমি, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

নিজস্ব ফন্টে পাঠ্যবই ছাপবে এনসিটিবি

দায়িত্ব নেয়ার সময় থেকেই দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। এগুলোর মধ্যে শিক্ষাখাতে সংস্কারের কিছু প্রতিশ্রুতি এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বদল এসেছে পাঠ্যবইয়ে। এবার জানা গেলো, বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই নিজস্ব মুদ্রাক্ষর বা ফন্ট তৈরির পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

সম্প্রতি এনসিটিবির জাতীয় শিক্ষাক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা আরো জানিয়েছেন, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের সব পাঠ্যবই নিজস্ব ফন্টে ছাপতে চায় এনসিটিবি। তার আগেই নতুন ফন্ট চূড়ান্ত করা হবে। এজন্য শিগগিরই দক্ষ কোনো প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফন্ট তৈরির দায়িত্ব দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন ফন্টে সব বই ছাপানো সম্ভব হলে পাঠ্যপুস্তকে এনসিটিবির নিজস্ব একটা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হবে।

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান একেএম রিয়াজুল হাসান গতকাল শনিবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এনসিটিবির জন্য একটা ইউনিক বাংলা ও ইংরেজি ফন্ট আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি। যা দিয়ে বোঝা যাবে যে, এটা এনসিটিবির বই। এতে করে যে সুবিধাটা হবে, সেটা হলো-বইগুলো অন্য কেউ কপি করতে পারবে না। যেহেতু স্বত্ত্বটা আমাদের থাকবে, সুতরাং অন্য কেউ কোনো কনটেন্ট ঢোকানোর সুযোগ পাবেন  না। এটা অবশ্যই ইউনিকোড ভিত্তিক হবে। অনলাইনেও আমরা এটা ব্যবহার করবো। আমাদের বইগুলো ওপেন এডুকেশনাল রিসোর্স হিসেবে যখন থাকবে, তখন আমাদের নিজস্ব ফন্টেই থাকবে। ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের নিজস্ব ফন্টে বই ছাপানো সম্ভব।

এ ছাড়া সংস্কারের অংশ হিসেবে শিক্ষায় আইসিটি বিষয়ের আধুনিকায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এজন্য প্রয়োজনে আইসিটির জন্য আলাদা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে উপদেষ্টা কমিটির সভায়।

ইতোমধ্যে সংস্কারের অংশ হিসাবে আগের শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ এর শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়েছে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীরা এসব বই হাতে পাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ওই দিনের সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২ এর ভিত্তিতে প্রণীত সর্বশেষ পাঠ্যবই পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ে গ্রাফিতি ও জুলাই বিপ্লব সম্পর্কিত বিভিন্ন রচনা যুক্ত করা, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক পরিমার্জনে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

উপদেষ্টা আরো বলেন, আগামী জানুয়ারিতে পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

বর্তমান সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগান্তকারী পরিবর্তনের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি অত্যন্ত আধুনিক, কার্যকর ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কাজে সংযুক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, শিক্ষাকে জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে না পারলে সেই শিক্ষা কোনো কাজে আসবে না। তাই একটি জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন জরুরি।

সভায় এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিষয়ভিত্তিক পরিমার্জন কমিটি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের আলোকে প্রাথমিকের ৩৪টি পাঠ্যপুস্তক এবং মাধ্যমিকের ১০১টি পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন শেষ করেছে। ১১টি ধাপে পরিমার্জন কার্যক্রম শেষ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) চূড়ান্ত অনুমোদন নেয়া হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জনের ক্ষেত্রে বিতর্কিত, ভ্রান্ত ও অতিরঞ্জিত কনটেন্ট বাদ দেয়া, সঠিক ইতিহাস সংযোজন, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রচনা, ছবি বা কনটেন্ট সংযোজন এবং বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংশ্লিষ্ট রচনা- বিষয়বস্তু হিসেবে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে-আমরা তোমাদের ভুলব না, শহীদদের নিয়ে লেখা, ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বিষয়ে-কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও গ্রাফিতির ভাষা, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে স্থান পেয়েছে সিঁথি (কবিতা), অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে গণঅভ্যুত্থানের কথা এবং নবম শ্রেণির ইংরেজিতে গ্রাফিতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে গ্রাফিতির ব্যবহার সংযোজন করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের ব্যাক কভারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংশ্লিষ্ট গ্রাফিতি সংযোজন করা হয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে যুগোপযোগী, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে শিখন সামগ্রী উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

সভায় এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর রিয়াদ চৌধুরী জানান, প্রাথমিকের পাঠ্যবই ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপানো শেষ হবে। মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপা ও বিতরণ করা হবে। অন্যান্য পাঠ্যবই ছাপা শেষ করে ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

এ ছাড়াও সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ বি এম বদরুজ্জামান বিগত বছরগুলোতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসরণ করার কারণে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের শিখন ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে জানান। তিনি এই ঘাটতি নিরসনে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি অনুসরণের সুপারিশ করেন। এছাড়া এনসিটিবির নিজস্ব ফন্ট ও বানানরীতি অনুসরণের পরামর্শ দেন। ৪র্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ফন্ট সমতাকরণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বানানটি ঠিক করার বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের নজরে আনেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এবারের পাঠ্যবইয়ের এই পরিমার্জন সংক্রান্ত কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরব্যাপী সর্বসাধারণের কাছে থেকে পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন সংক্রান্ত মতামত গ্রহণের সুযোগ রাখা হোক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানান, পরবর্তী বছরে পরিমার্জনের শুরুতে জাতীয় শিক্ষাক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন বলেন, শিক্ষার্থীদের জীবনাচারণের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের জন্য একাধিক শ্রেণিতে (পঞ্চম ও নবম) বিদায় হজের ভাষণ শ্রেণি উপযোগী করে পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করার বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। এছাড়া তিনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের জীবনী প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন।

এ ছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, বিতর্কিত বিভিন্ন বিষয় বাদ দেয়া ও জুলাইয়ের গণআন্দোলনের বিষয়বস্তু ও গ্রাফিতি সংযোজন প্রশংসনীয় উদ্যোগ এক্ষেত্রে কনটেন্ট শুদ্ধ-নির্ভুল করার বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে শ্রেণি কার্যক্রমে খুব অল্প সময় পাবেন বলে উল্লেখ করেন। তাদের শিখন ঘাটতির কথা বিবেচনায় রেখে তিনি ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়নের সুপারিশ করেন।

এ ছাড়াও আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বলেন, মাদরাসার পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বানানরীতি অনুসরণ করতে হবে।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শাহনওয়াজ দিলরুবা খান বলেন, সাধারণ ধারার শিক্ষার সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার সমন্বয় এবং বিষয় সংখ্যার সামঞ্জস্য বিধান জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস পাঠ্যপুস্তকে শব্দচয়ন, কনটেন্ট, গ্রাফিতি ও ছবি নির্বাচনে কালচারাল সেনসিটিভিটি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এসব নির্বাচনের পরামর্শ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ শিক্ষার্থীর শিখন আনন্দময় করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করেন। এছাড়া যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি আধুনিক শিক্ষাক্রম প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিবিধ আলোচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিখন সামগ্রী প্রণয়নের জন্য 'শিক্ষাক্রম পরিমার্জন কমিটি' গঠনের সুপারিশ করেন এবং আইসিটি বিষয়ের আধুনিকায়নের জন্য একটি আলাদা 'আইসিটি কমিটি' গঠনের সুপারিশ করেন।

সভায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ স্থগিত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২ এর ভিত্তিতে প্রণীত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অনুমোদন করা হয়।   এ ছাড়াও ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষাক্রমের আলোকে শিখন সামগ্রী প্রণয়নের লক্ষ্যে অতি দ্রুত (জানুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে) 'শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন কমিটি' গঠন এবং এ জন্য একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
 

জনপ্রিয়