ঢাকা সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

অবৈধ নোট-গাইড কোম্পানিতে কর্মরত দুই শতাধিক শিক্ষা ক্যাডার!

শিক্ষা

বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০০:২০, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:১২, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

অবৈধ নোট-গাইড কোম্পানিতে  কর্মরত দুই শতাধিক  শিক্ষা ক্যাডার!

অবৈধ নোট-গাইড কোম্পানিতে অবৈধভাবে চাকরি করছেন বিসিএস সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের দুই শতাধিক কর্মকর্তা। কখনো অফিস বা কলেজ সময়ের পরে তারা এসব কোম্পানির অফিসে বসে বই লেখার কাজ করেন। আবার শিক্ষা অধিদপ্তর বা এনসিটিবির বড় পদে চাকরিতে থাকাকালে গাইডবই মালিকদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে রাখেন। অবসরের পর ওইসব কোম্পানিতে তারা চাকরি শুরু করেন। নোট-গাইড বই প্রকাশকদের একটা বড় অংশ এনসিটিবির বিনামূল্যের বই ছাপার ঠিকাদারি নেন। একই প্রেসে তারা বৈধ ও অবৈধ বই ছাপেন। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।  

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নোট-গাইড কোম্পানিগুলোর মালিকদের টার্গেট প্রেষণে অথবা বদলিভিত্তিক পদায়ন পাওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদরাসা ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়া যাদের বিভিন্ন শ্রেণির বৈধ ও অবৈধ বই, চাকরির পরীক্ষার গাইড, নোট-গাইড বা সহায়ক বই লেখা রয়েছে তারাও টার্গেট। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারদের শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে তদবির করে পদায়ন পাইয়ে দিতেও ভূমিকা রাখতে পারেন কোনো কোনো নোট-গাইড কোম্পানির মালিক। তারাই আবার সৃজনশীল বইয়েরও প্রকাশক।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে দুই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দীপু মনি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন আমলা ও তাদের নিকটাআত্মীয়রা হঠাৎই লেখক হয়ে উঠেছিলেন। আর তাদের অখাদ্য ও হাবিজাবি বই প্রকাশক ছিলেন এইসব নোট-গাইড প্রকাশকরাই। এতে এনসিটিবিতে কর্মরতরা কেউ কথা না শুনলেই ঘাঁটি নাড়িয়ে দিতে পারতেন নোট-গাইড মালিকরা। তাই এনসিটিবিতে কেউ সৎ থাকতে চাইলেও প্রায় অসম্ভভ হয়ে উঠেছিলো। 

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যখনই পাঠ্যবইয়ে, সিলোবাসে এবং পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্নের মানবণ্টনে পরিবর্তন হয় সেসব পাণ্ডুলিপি ও তথ্য-উপাত্ত আগেভাগেই নোট-গাইড কোম্পানিগুলো দরকার হয়। সেই অনুযায়ী নোট-গাইড বই আগেভাগে লিখিয়ে নেওয়া হয়। এসএসএসসি, এইচএসসি, এনটিআরসিএ, ডিগ্রি পাস কোর্স ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সসহ প্রায় সব পাবলিক পরীক্ষার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাই। 

এছাড়া পাঠ্যবইয়ের আগেই বাজারে নোট-গাইড ছেড়ে দিলে বেশি বিক্রি নিশ্চিত হয়। আবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটি ও প্রধানদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে নোট-গাইড কোম্পানির প্রতিনিধিদের।        

অনুসন্ধানে জানা যায়, দিকদর্শন কোম্পানির নোট-গাইড বই থেকে গত তিন বছর ধরে ডিগ্রির সব পরীক্ষার প্রশ্ন শতভাগ কমন পড়ছে। এছাড়াও কয়েকবছর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ইংরেজির একটা প্রশ্ন হুবহু একটা গাইড বই থেকে কমন পড়েছে। তদন্তে দেখা যায় যিনি ওই গাইড কোম্পানিতে চাকরিকালে ওই গাইড লেখা হয় তিনিই ওই প্রশ্ন কেলেংকারির তদন্ত কমিটিতে ছিলেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা হিসেবে।

আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে আসা একজন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে প্রায় ত্রিশটি বই লিখিয়ে নিয়েছেন তার অনুগত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের দিয়ে। তারাও একটা নোট কোম্পানির অফিস ব্যবহার করছেন। সেই নোট কোম্পানিও পাঠ্যবই ছাপছে। সেইসব ক্যাডার কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে ইতোমধ্যে এনসিটিবিতে বদলি করা হয়েছে। আরো কয়েকজনকে করতে চাইছেন। এখন তিনি নোট-গাইড কোম্পানির এক বা একাধিক মালিক ধরার চেষ্টা করছেন।

দৈনিক আমাদের বার্তায় গত ৩১ জুলাই ‘শিক্ষাভবন যখন কর্মকর্তার নোট-গাইড বিক্রির দোকান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।  প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষা ভবনকেই এবার নোট-গাইড বই বিক্রির দোকান বানিয়ে ফেলেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। পদের সর্বোচ্চ অপব্যবহার করেই চলছেন পাঁচ বছর আগে সরকারি কলেজ থেকে বদলি হয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদে জেঁকে বসা বিপুল।

গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিস চলাকালীন সময়ে মিনি ট্রাকে করে আসা গণিতের শত শত কপি নোট-গইড অধিদপ্তরের বিভিন্ন কক্ষে রাখা হচ্ছে। লেখক নিজেই, কখনো তার অনুগতরা সরকারি-বেসরকারি কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের গছিয়ে দিচ্ছেন ওইসব নোট-গাইড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে বিপুলের এই পদের অপব্যবহারের তথ্য তুলে ধরছেন।  

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চতর গণিতের ওই বইটি লিখেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসসহ চার লেখক। প্রকাশ করেছে হাসান বুক হাউস নামের এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।  এই হাসান বুক হাউসের রয়েছে একাধিক প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা। তারা বিভিন্ন নামে টেন্ডারে অংশ নিয়ে  এনসিটিবির পাঠ্যবই ছাপে।

কোনো শাস্তি না দিয়ে বিপুলকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর একটা কলেজে বদলি করা হয়। তবে, বিপুল সেই কলেজে না গিয়ে নোট-গাইড কোম্পানির ঢাকার অফিসেই সময় কাটান বলে জানা গেছে। 

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিজ কক্ষে বসে নিজের লেখা নোট-গাইড বিক্রির অভিযোগ উঠেছিলো তৎকালীন মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. এলিয়াছ হোসাইনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর সে বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে সিলেটের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে বদলি করা হয়। সেই এলিয়াছও অধিদপ্তরের পরিচালক পদে বদলি হয়ে আসার আগে যশোরের একটা নোট-গাইড কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অবসরের পরও এলিয়াছ সেখানেই চাকরি  করছেন বলে জানা গেছে।   

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সরকারি চাকরি করে অন্য যে কোনো চাকরি করা আইনসিদ্ধ নয়। এটা  তো সবাই জানেন।

তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের আগে জেনে নিতে হবে তিনি কোনো নোট-গাইড বইয়ের লেখক কি-না বা কোনো কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা। তাতে স্বার্থের সংঘাত এড়ানো যাবে। যদিও সব শ্রেণির নোট-গাইড বই তো নিষিদ্ধ নয়।  

জনপ্রিয়