এখানে এক বছর চাকরি করে কেউ যদি ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালান্স করতে না পারে তাহলে তো সে কোনো উপযুক্ত শিক্ষা ক্যাডারই না! এমনটাই চাউর রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) শিক্ষা পরিদর্শক ও সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে পদায়ন পাওয়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে। এমন ‘ঐতিহ্য’ ধরে রাখতে ডিআইএর একজন পরিদর্শক উপরির টাকা গুণতে বেকার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। আরেকজন গেছেন শাশুড়ীকে নিয়ে। আরেক নারী কর্মকর্তা তার ভুয়া সাংবাদিক স্বামীর দাপট দেখিয়ে গত পাঁচ বছর ঢাকার বাইরের এক সরকারি কলেজের সবাইকে তটস্থ রেখে ৫ আগস্টের পর নতুন পরিচয়ে ডিআইএতে বদলি হয়ে এসেছেন। আবার কোথাও একসঙ্গে তদন্তে যাওয়া দুই নারী কর্মকর্তা ঢাকায় ফিরে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে অস্থির করেছেন শিক্ষা ভবনের অফিসের কক্ষ।
কর্মকর্তা স্ত্রীর পক্ষ হয়ে বেকার স্বামী যখন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কাছে ঘুষ চাইলেন তখন যথারীতি অভিযোগ এলো দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর কাছে। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা আসল ঘটনাগুলোর তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন।
এদিকে গত তিন সপ্তাহে তদন্ত ও পরিদর্শন করা তিন জেলার ত্রিশটি প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। ঘুষের টাকা দিয়েও তারা বিপদে। কারণ, ঢাকা থেকে টেলিফোন করে তাদেরকে বলা হচ্ছে, ঘুষের বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকম পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হতে পারে। যদি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় তাহলে অভিযোগের তদন্তেও পাঠানো হবে ডিআইএতে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারদেরই। ঘুষ দেওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শুধু তাদের অভিযুক্ত সহকর্মীদের বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে বলবেন যে, তারা ঘুষ দেননি এবং কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেননি।’
নাম না প্রকাশের শর্তে শেরপুর অঞ্চলের একজন শিক্ষক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাকে আমরা সুগন্ধি জারিফ (ছদ্মনাম) বলে চিনতাম। গত ১৬ বছর ধরে যাকে আমরা বেকার ও প্রায় ভবঘুরে জেনে এসেছি সেই জারিফই এবার দেখি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ জারিফ পুরোই বেকার অদ্যাবধি। জানা গেলো জারিফ এসেছেন তার কর্মকর্তা স্ত্রীর সঙ্গী হিসেবে। টাকা গুণতে আর ঘুষ চাওয়ার দায়ে সম্ভাব্য ‘গণধোলাই থেকে রক্ষা করতে’।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করছেন সবাই। অভিযোগ ওঠার পর গোমর ফাঁস হয়েছে একজনের স্বামীর পেশা সম্পর্কে। এতদিন সহকর্মীদের ঝাড়ি মেরে আসছিলেন এই বলে যে, তার স্বামী অমুক পেশার খুব দাপুটে একজন। ঘুষের অভিযোগ ওঠার পর জানা গেলো, স্বামীটি নিছকই একজন ভুয়া সাংবাদিক।
যে তিন জেলার ত্রিশ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
কুষ্টিয়ার দশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নুরুজ্জামান বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজ, দৌলতপুর; ঝাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; বাহিরমাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; আড়িয়া ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; পিপুলবাড়ীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; কল্যাণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; এসএমএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর; শ্রীরামপুর মোজাদ্দেদীয়া দাখিল মাদরাসা, মিরপুর ও সুলতানপুর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদরাসা, মিরপুর।
শেরপুর সদরের দশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নিজাম উদ্দিন আহমেদ মডেল কলেজ; শেরপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ; কসবা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট; সুলতানপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট; খুনুয়া চরপাড়া মৌলভী নগর উচ্চ বিদ্যালয়; কুমরী কাটাজান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়; আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়; আলহাজ্ব বাবর আলী হাইস্কুল ; বয়ড়া পরানপুর দাখিল মাদরাসা ও সন্নাসীর চর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা।
টাঙ্গাইলের দশ প্রতিষ্ঠান: নরিল্যা মহাবিদ্যালয়, নতুন কহেলা কলেজ, বিবিজি উচ্চ বিদ্যালয়, বানিয়াজান দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মমতাজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, পিটিএস উচ্চ বিদ্যালয়, হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, চাপাইদ পিরোজপুর এম আই দাখিল মাদ্রাসা, জটাবাড়ী ফাজিল মাদরাসা ও হরিনাতেলী আর এম দাখিল মাদরাসা।