সরকারের তরফে বারবার সতর্ক করার পরও কানে নেয়নি। অতঃপর শুক্রবার রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ও কয়েকজন সমন্বয় অভিযান চালিয়েছে গাজীপুরের মাস্টার-সিমেক্সের গোডাউনে। জব্দ করেছে পাঠ্য বই ছাপার আর্ট কার্ড। একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা বলছেন, পাঠ্য বই ছাপার কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটি কোটি শিক্ষার্থী ও সরকারকে জিম্মি করে রেখেছিল একটা সিন্ডিকেট।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মাস্টার সিমেক্স এবারও বই ছাপার কাজ পেয়েছে। ছাপার জন্য তাদের যত কাগজ দরকার তার চাইতে ঢের বেশি কাগজ মজুদ করে রেখেছিল অধিক মুনাফার আশায়।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের সংস্কারের অংশ হিসাবে আগের শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ এর শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়েছে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীরা এসব বই হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও তা ছাপাখানার মালিকদের ঢিলেমিতে ভেস্তে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট রজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এবার ১২ বছর আগের শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে নতুন বছরে ছাপা মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ১৬ লাখ। উপরন্তু, গত কয়েক বছরে বিপুল সংখক পাঠ্যবই ভারতে ছাপা হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে এবার পুরোটাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই ছাপার কাজ করছে। সব কিছু গুছিয়ে আওয়ামী আমলের দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র দেয় সরকার পক্ষ। কিন্তু, নানা অজুহাতে মুদ্রণ কাজে প্রেস প্রতিষ্ঠানগুলোর ঢিলেমি প্রকট হয়ে ওঠে। আবার দীপু মনি সিন্ডিকেটের কতিপয় প্রচার মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার চালানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকের পাঠ্যবই ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপানো শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি। এখন অবধি মুদ্রণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি হতাশাজনক। এমনকি কোনো কোনো প্রেস নিম্নমানের কাগজ ও কালিতে বই ছাপতে শুরু করে।
নিম্নমানের কাগজে ছাপানোয় ৮০ হাজার পাঠ্যবই ইতোধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফরাজী প্রেস অ্যান্ড পাবলিকসন্সের নিম্নমানের কাগজে ছাপানো প্রায় ৩০ হাজার কপি প্রাথমিকের পাঠ্যবই হাতেনাতে ধরে বাতিল করে এনসিটিবির মনিটরিং টিম। কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর না মানায় ও উজ্জ্বলতা কম হওয়ায় শোকজও করা হয় ফরাজী প্রেসকে। এর আগে আরো চারটা প্রেসের ৭০ হাজার বই বাতিল করা হয়।