শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, উচ্চ শিক্ষায় গবেষণা করতে হলে শিক্ষার বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে এটা হঠাৎ করে হবে না। এ ব্যাপারে আমার মাথায় আছে যে চিন্তাগুলো তা হলো- কাদেরকে দিয়ে শুরু করবো, প্রাইমারি শিক্ষক, নাকি বেসরকারি খাতের এমপিওভুক্ত শিক্ষক, যারা ১২ হাজার টাকা বেতন পান। তাদের এমপিও বাড়াবো নাকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মান মর্যাদা বাড়াবো? কোনটা আগে করবো। আপনারা আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এই প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যামব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করা গবেষকদের নতুন ভিসি হিসেবে পদায়ন দেয়া হয়েছে। যা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এরা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন করে ডায়নামিক করবে। সেই চ্যালেঞ্জ তারা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইউজিসির নাম পরিবর্তন করে উচ্চ শিক্ষা কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও অনেক শিক্ষক আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ পর্যায়ের গবেষক। আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটগুলোতে খুঁজলেই জানা যাবে তাদের গবেষণার সংখ্যা। পাশাপাশি তাদের গবেষণার সাইটেশনের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য যা নিয়ে আলোচনা আমাদের উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনায় হতে দেখি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শুধু রাজনৈতিক আলাপ হয়, মেধাবী শিক্ষকরা আড়ালে পড়ে থাকেন। কেন তাদের আড়ালে থাকা বা কোনঠাসা হয়ে থাকা তা জানতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে ঢালাওভাবে কিছু বলা মুশকিল। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মানের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলোতেও উচ্চশিক্ষা দেয়া হয়। সব মিলিয়েই একটা বড় সমস্যা হলো, এইচএসসি পাস করার পর বেশিরভাগ মেধাবী ও সামর্থ্যবান পরিবারের ছাত্ররা বিদেশ চলে যেতে চায়, যা আগে দেখা যেত না। র্যাংকিং নিয়ে বারবার কথা হচ্ছে। কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং এ স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার প্রদর্শন ইত্যাদি চলে। শিক্ষক নিয়োগেও রয়েছে অনিয়ম যা আমি ছাত্রাবস্থায় থাকার সময় ছিল না। এই অনিয়মগুলো নিয়ে কথা বলার মাঝে আমি একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক দুর্নীতি হয়েছে যার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পঙ্গু হওয়ার পথে। এত অসুবিধা ও সমস্যার মাঝেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও অনেক শিক্ষক আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ পর্যায়ের গবেষক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শুধু রাজনৈতিক আলাপ হয়, মেধাবী শিক্ষকরা আড়ালে পড়ে থাকেন। বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আন্দোলনের পর প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই অভিভাবকহীন হয়ে গিয়েছিল। উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ— কাউকেই পাওয়া যাচ্ছিল না। এ থেকেই বোঝা যায়, নিয়োগের ক্ষেত্রে কেমন রাজনৈতিক দলীয়করণ হয়েছে যে সরকার পরিবর্তনের ফলে সবাইকে চলে যেতে হয়েছে। এমনকি অনেক প্রতিবেদক পত্রিকা ও মিডিয়ায় রিপোর্টও করেছে নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে। তবে কেউই লক্ষ্য করেনি। যারা এসব উচ্চপদে যান তাদের গবেষণায় যদি ৫ থেকে দশ হাজার সাইটেশন থাকে সেক্ষেত্রে এই মানুষগুলো রাজনীতি করার আদৌ সময় পেতেন না। শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি মুদ্রার এক পিঠ। মেধার অবমূল্যায়ন মুদ্রার অন্য পিঠ। শিক্ষকদের প্রশাসনিক দক্ষতারও প্রয়োজন আছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা একাডেমিক নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রশাসনিক নেতৃত্বও দেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।