শিক্ষাকে ক্যাডার-বহির্ভূতকরণের উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে সংস্কারের নামে আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতি। একইসঙ্গে সংস্কার কমিশনের এই উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবিগুলো না মানলে ৩১ ডিসেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা। ২৫টি ক্যাডারের সংগঠন 'আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ' নেতারা শিক্ষা ক্যাডারের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলানায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন এই হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতারা।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সদস্যের উপস্থিতিতে সাংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ক্যাডারের পক্ষ থেকে চলমান আন্দোলনেও সমর্থন জানানো হয়।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিলুপ্তির যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে সংগঠনটি জানায়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার- বহির্ভূতকরণের অশুভ প্রচেষ্টা প্রতিরোধকল্পে এবং শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিন উদ্দিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. রুহুল কাদির, প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, প্রফেসর সৈয়দ মইনুল হাসান, প্রফেসর মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ।
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বলেন, ক্যাডার বহির্ভূতকরণের উদ্যোগ প্রতিহত করতে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুত। সংস্কার কমিশন শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্তির কথা প্রচার করে ক্যাডার সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
তারা আরো বলেন, দেশের বিদ্যমান ক্যাডার সার্ভিসগুলোর মধ্যে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তার একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।
শিক্ষা ক্যাডারদের ১৫ দফা দাবি হলো: বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। সব প্রকার কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য তা শতভাগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সমান সুযোগ দিতে হবে। মন্ত্রণালয়সহ ক্যাডার সংশ্লিষ্ট সব পদে স্ব স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে, অর্থাৎ কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারসহ সব ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার একটি পেশা-বিশেষায়িত ক্যাডার। তাই সাধারণ শিক্ষার অন্তর্গত সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষা ধারার সব শিক্ষা স্তর যেমন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা কিংবা মাদরাসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের অপেশাদার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যে সব দপ্তরের নিয়োগ বিধিমালায় অন্যায্যভাবে প্রশাসন ক্যাডারের পদস্তর উল্লেখ করে একতরফা গেজেট করা হয়েছে, তা সংশোধন করে তাতে শিক্ষা ক্যাডারের পদস্তর সংযোজন করতে হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৬ স্তরের পদসোপান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদকে ৩য় গ্রেডে উন্নীত করতে হবে এবং আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করতে হবে।
প্রতিটি শিক্ষাস্তরের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি ও দপ্তর স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষণ একাডেমি ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কলেজ ও দপ্তর-অধিদপ্তরগুলো বিদ্যমান প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের প্রাপ্য পদ সৃজন করতে হবে। নিয়মিত রুটিনে বছরে দুইবার সব টায়ারে একই সঙ্গে পদোন্নতি দিতে হবে। প্রভাষকদের পদোন্নতির শর্তপূরণ হলে যথাদ্রুত ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দিতে হবে।
শিক্ষাকে নন-ভেকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করতে হবে এবং অর্জিত ছুটি নিশ্চিত করতে হবে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। বদলি নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ক্যাডারে পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এ শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।