সারাদেশের নতুন শিক্ষাবর্ষের (২০২৫ খ্রি.) বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ শুরু হবে আজ। এজন্য গত কয়েক দিন ধরেই স্কুলগুলোতে বই পাঠানো হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুশৃংঙ্খলভাবে বিতরণ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথম দিন থেকে প্রাথমিকের সব পাঠ্যবই ও মাধ্যমিকের তিনটি আবশ্যিক বই বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে আজ সব শ্রেণির পরিমার্জিত বইয়ের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) কার্যক্রমও উদ্বোধন করা হবে।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি থানা ও উপজেলার শিক্ষকদের ইএফটিতে সফলভাবে বেতন দেয়া শুরু হয়েছে। আসছে জানুয়ারি থেকে এমপিওভুক্ত সব শিক্ষকের বেতন ইএফটিতে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে ইএফটি বিষয়ক ইএমআইএস সেল ও আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও সুবিধাভোগী শিক্ষকরা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, এসসিটিবি চেয়ারম্যান প্রপেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম।
৫ আগস্ট রজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এবার ১২ বছর আগের শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষা ব্যবস্থা। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে নতুন বছরে ছাপা মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ১৬ লাখ, বাড়ছে ছাপার বাজেটও।
বিদায়ী বছরের নভেম্বরে জাতীয় শিক্ষাক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সভায় এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী জানান, পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জনের ক্ষেত্রে বিতর্কিত, ভ্রান্ত ও অতিরঞ্জিত কনটেন্ট বাদ দেয়া, সঠিক ইতিহাস সংযোজন, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রচনা, ছবি বা কনটেন্ট সংযোজন এবং বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংশ্লিষ্ট রচনা- বিষয়বস্তু হিসেবে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে-আমরা তোমাদের ভুলব না, শহীদদের নিয়ে লেখা, ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বিষয়ে-কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও গ্রাফিতির ভাষা, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে স্থান পেয়েছে সিঁথি (কবিতা), অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে গণঅভ্যুত্থানের কথা এবং নবম শ্রেণির ইংরেজিতে গ্রাফিতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে গ্রাফিতির ব্যবহার সংযোজন করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের ব্যাক কভারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সংশ্লিষ্ট গ্রাফিতি সংযোজন করা হয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে যুগোপযোগী, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে শিখন সামগ্রী উন্নয়ন করা প্রয়োজন।