সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল হক। শুধু তাই নয়—গাড়ির ড্রাইভার ও জ্বালানি খরচও নিচ্ছেন উপজেলা পরিষদ থেকে। জিয়াউলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার লাকী সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মূলত স্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ওই গাড়িটি দখলে নিয়েছেন তিনি। ওই গাড়ি নিয়ে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়েও যাতায়াত করেন জিয়াউল।
বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন কাণ্ডে জিয়াউলের নৈতিকতা বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরাও। তবে এসব সমালোচনা কিংবা অসন্তোষ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই জিয়াউলের—যদিও কালবেলার কাছে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যানের গাড়ি ব্যবহারের কথা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ১৯ আগস্ট সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। চেয়ারম্যানদের অপসারণের পর উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান ইউএনওরা। সেই ধারাবাহিকতায় সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হন সুরাইয়া আক্তার লাকী। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ৩ ডিসেম্বর ইউএনও হিসেবে সুবর্ণচরে যোগ দেন বিসিএস প্রশাসন ৩৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা।
তার স্বামী সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউল হক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের চেয়ারম্যান ও ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্ত্রী উপজেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর হুট করে জিয়াউল উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য কেনা গাড়ি (নোয়াখালী ঘ-১১০০৪২) নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু করেন। সুবর্ণচর উপজেলা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। ইউএনওর স্বামী গাড়ি ব্যবহার করলেও জ্বালানি ও গাড়ির ড্রাইভারের বেতন বহন করা হচ্ছে উপজেলা প্রশাসন থেকে। আবার ইউএনও হিসেবে সুরাইয়া নিজেও তার জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িটি ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী মিলে সরকারের দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিয়াউল হক বলেন, বিষয়টি ঠিক নয়। আমি ডিনের গাড়ি ব্যবহার করি। তবে ডিনের গাড়ি না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি মিটিং থাকলে মাঝেমধ্যে ওই গাড়িটি (উপজেলার গাড়ি) আমাকে নামিয়ে দিয়ে যায়।
এদিকে সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে ড. জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে। তিনি ঠিকমতো অফিস করেন না। সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২-৩ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তাও উপজেলা পরিষদের গাড়ি ব্যবহার করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের নৈতিকতা না থাকলে শিক্ষা ব্যবস্থা কখনই ঠিক হবে না। জিয়াউল স্যার ঠিকমতো বিশ্ববিদ্যালয়েও আসেন না। তার স্ত্রী ইউএনও লাকীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা পরিষদের গাড়ি ব্যবহার করছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কী শেখাবেন! তিনি কি কখনই তার শিক্ষার্থীদের আদর্শ হতে পারবেন?
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একাধিকবার ফোন করা হলেও ইউএনও সুরাইয়া আক্তার লাকী কল রিসিভ করেননি।