প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে শিক্ষার কয়েকটি অধিদপ্তর ও দপ্তরে। বিভিন্ন স্তরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় এমন অবস্থা। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। একদিকে সেবা প্রত্যাশীরা দূর দূরান্ত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে এসে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন না। অপরদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে যেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চিতরা।
উচ্চশিক্ষার দেখভাল করার সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) এখনো পূর্ণকালীন সদস্য পদে সব নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের-প্রো-ভিসি, ট্রেজারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রয়েছে। পাঁচ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ও ট্রাস্টি বোর্ড নতুন করে গঠন করা হয়েছে। এতে উপাচার্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্যানেল সুপারিশ দিলেও সেগুলোর দ্রুত সমাধান মিলছে না।
এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যানসহ আরো বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষপদ এখনো শূন্য। এসব দপ্তরের অধীন অনেক পদে মাসের পর মাস ধরে কেউ নেই।
গত ২ জানুয়ারি মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা এ বি এম রেজাউল করিম অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার পরও তিনি ঘুরঘুর করছেন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কোনোমতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে দপ্তর। অধিদপ্তরের অর্থ শাখার পরিচালক ও মাধ্যমিক শাখার উপ-পরিচালকের পদ, কলেজ ও প্রশাসন দপ্তরের পরিচালক পদ এখনো ফাঁকা। অথচ শত শত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা গত ১৬ বছর নানাভাবে বঞ্চিত।
শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে নায়েম। কিন্তু এই দপ্তর চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বের মহাপরিচালক দিয়ে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
নায়েম-এ মহাপরিচালকের পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. শাহ মো. আমির আলী। মহাপরিচালকের পদ শূন্য থাকায় বাজেট বাস্তবায়নসহ নানা কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, ভর্তি প্রক্রিয়াসহ পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদনসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে শিক্ষাবোর্ডগুলো। ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান পিআরএলে গেছেন গত বছরের শেষ দিনে। এখনো কাউকে পদায়ন করা হয়নি। সম্প্রতি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হলেও এই বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি পদের মধ্যে সাতটি পদই শূন্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজই থমকে গেছে। জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১০ এপ্রিল। এর আগে কেন্দ্র অনুমোদন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ নানা প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব পদ পূরণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে আট পরিদর্শক পদের মধ্যে পাঁচটি পদই শূন্য।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক আজাদ হোসেন চৌধুরী আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান না থাকায় আর্থিক বিভিন্ন কাজ ভালোভাবে করা যাচ্ছে না। জরুরি অনেক কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব আগস্টে পট পরিবর্তনের পরই পালিয়ে গেছেন। কয়েক মাস ধরে এই শীর্ষ দুই পদ শূন্য থাকলেও তা পূরণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। দুই দপ্তরের সচিব পদ শূন্য থাকায় সারা দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের পর আর্থিক সুবিধা দেয়ার কার্যক্রম চলছে না। চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন অবসরে যাওয়া প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, অবিলম্বে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড পূনর্গঠন করতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খালি পদে পদায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই এসব পদে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।