ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ , ৩০ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পাঠ্যবই সংরক্ষণে রোগের শিকার শিক্ষা অফিসের জনবল

শিক্ষা

মিথিলা মুক্তা, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

পাঠ্যবই সংরক্ষণে রোগের শিকার শিক্ষা অফিসের জনবল

কেন্দ্র থেকে পাঠানো বিনামূল্যের পাঠ্যবই গ্রহণ, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিযুক্ত উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মচারীরা নানা রোগব্যাধির শিকার হচ্ছেন। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের জন্য পাচ্ছেন না অতিরিক্ত কোনো সম্মানীও। অথচ পাঠ্যবইয়ের কাজে নিযুক্ত থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বছরে মূল বেতন-ভাতার বাইরে ছয়টি বোনাস পেয়ে থাকেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে থাকা স্কুলের কক্ষ থেকে নিজ নিজ স্কুলে বই পরিবহনের জন্যও বই প্রতি ১৫ পয়সা বরাদ্দ দেয় এনসিটিবি। সেই বরাদ্দেরও কানাকড়িও পান না মাধ্যমিক পর্যায়ের জেলা ও উপজেলা অফিসের কর্মচারীরা। আর প্রাথমিক পর্যায়ের অফিসগুলো থেকে দেয়া হয় নামমাত্র সম্মানী। বঞ্চিত এই জনবল তাই বিনামূল্যের পাঠ্যবই গ্রহণ ও বিতরণের খরচ মেটাতে উপযুক্ত সম্মানীর দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি এনসিটিবিতে একটি চিঠিও দিয়েছেন তারা।   

দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য পাঠ্যবই সরক্ষণের জন্য কোনো গোডাউন নেই। পাশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত কক্ষে বইগুলো রাখতে হয়। পোকামাকড় ও ইদুর মারার ওষুধ কিনতে হয় নিজ খরচে। মাধ্যমিক পর্যায়ের সারাদেশের ৫২০টি শিক্ষা উপজেলা/থানায় কর্মরত দুই হাজারের বেশি ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী এই বই গ্রহণ ও সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকেন। ট্রাক ও নৌকাযোগে পরিবহন করা এসব বই ড্রাইভারদের কাছ থেকে বুঝে নিতে শুক্র-শনিবার সকাল-সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত অবধি জেগে থাকতে হয়। উপরন্তু, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বই সংরক্ষণের নির্ধারিত স্কুল অনেক সময় দুই-তিন কিলোমিটার দূরেও হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষা অফিসের এই জনবলকে যার যার গাঁটের টাকা খরচ করে কর্মযজ্ঞটি সামাল দিতে হয়। একইভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারীরাও খেটেখেটে হয়রান হলেও সম্মানী পান খুবই কম।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী মো. জামশেদুল আলম শ্বাসকষ্টে ভুগছেন কয়েক বছর ধরে। উপজেলা সদর শিক্ষা অফিস থেকে বেশ দূরে কাউনিয়া মানিক মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়। জামশেদুলের অফিস থেকে ওই স্কুলে রিকশায় যাতায়াত খরচ ১২০ টাকা। কিন্তু এই টাকা তাকে গাঁট থেকে খরচ করতে হয়। একইভাবে পটুয়াখালী সদর উপজেলার নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে বই রাখার স্কুলে যাতায়াত খরচ ৮০ টাকা। তিনিও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। কুমিল্লা সদরের বই রাখা হয় ইউসুফ হাইস্কুলে। অফিস সহায়ক আবু সালেহকে প্রতি বার ১০০ টাকা রিকশাভাড়া গুণতে হয় ওখান থেকে নিজ অফিসে যাতায়াতে।

বাকেরগঞ্জ ‍উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী মো. মজিবুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ফি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহুবার আমার অফিস থেকে বই রাখার স্কুলে যাতায়াত করতে হয় নিজের খরচে। বই যাতে ইঁদুরে নষ্ট না করে তার ওষুধ ছিটিয়ে, তেলাপোকা মেরে ও বইয়ের ধুলা ঝেড়ে ঝেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।  

ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নিয়ন্ত্রণে যে স্কুলে বই রাখা হয় সেখান থেকে চুনকুটিয়ার দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি অব্দি বেশ কয়েকবার বই আনতে যেতে হয়েছে। প্রতিবারই শিক্ষকদের পকেট থেকে টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে স্কুলটির একাধিক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন। 

মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. জাকির হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, প্রতিবছর বই সংরক্ষণের জন্য তেলাপোকা, ইঁদুরসহ বিভিন্ন পোকামাকড় ঠেকাতে কিটনাশকসহ বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া বইয়ের কেমিক্যালেরও গন্ধ আছে, গোডাউনে আটকা থাকার পর ধুলাবালি ও গন্ধের ভেতরেই কাজ করতে হয়। বছরের পর বছর এই কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেক সহকর্মী অ্যালার্জি ও অ্যাজমার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে ঊর্ধবতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত কারিগরি ও ইংলিশ ভার্সন বই জেলা শিক্ষা অফিসে আসে। বেশিরভাগ বই সরাসরি উপজেলায় যায়। বই ছাপার ঠিকাদারি পাওয়া ছাপাখানার মালিকরা বই ‍উপজেলায় পৌছেঁ দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমরা এই কাজ করে আসছি। ট্রাক থেকে বই নামাতে অনেক সময় গভীর রাত হয়। কখনো অফিসের মধ্যেই ঘুমাতে হয়। এতো খেটেও কোনো ওভারটাইমের নাম নেই।

তিনি পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বই বিতরণ ও পরিবহন তহবিল থেকে বেতনের সমপরিমান তিনটি ভাতা দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।   

এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, জেলা ও উপজেলার কর্মচারীরা মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অফিসের অধীনে। তবুও যেহেতু তারা প্রথমবারের মতো এই দাবি নিয়ে আমাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে প্রথমে এনসিটিবিতে মিটিং করবো। পরে মতামত ও সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।

প্রসঙ্গত, সরকার চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ কোটির বেশি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করছে।

পাঠ্যবই সংরক্ষণে রোগের শিকার শিক্ষা অফিসের জনবল

পাঠ্যবই সংরক্ষণে রোগের শিকার শিক্ষা অফিসের জনবল

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

জনপ্রিয়