জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত কয়েকমাস ধরে তারা মন্ত্রণালয়, আদালত, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন ও রিট করেছেন। পদ ফিরে পেতে ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধনও করেছেন কয়েকবার। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পারা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকরা সর্বশেষ শিক্ষা অধিদপ্তরগুলোতে গিয়েছিলেন ইএফটিতে নাম তুলতে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা অধিদপ্তর ও বিভাগীয় কমিশনারদের জানানো হয়েছে, ‘জোরপূর্বক পদত্যাগের পেছনে যাদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর মন্ত্রণালয় যথাযথ নির্দেশনা জারি করবে। তদন্ত প্রতিবেদন আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বেতন-ভাতা চালু থাকবে।’
দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে বেতন-ভাতা চালু রাখার সিদ্ধান্তকে সুখবর হিসেবে অভিহিত করেছেন ভুক্তভুগীদের কয়েকজন। তাদের মতে, বেতন-ভাতা চালু থাকলেই হলো। তাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, সুতরা তদন্ত প্রতিবেদন তাদের পক্ষেই আসবে।
পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শিক্ষকদের প্রকৃত সংখ্যা কেউ বলতে না পারলেও দুই হাজার বলে দাবি করছেন ভুক্তভুগীদের অনেকেই। কাউকে আবার এলাকায় ও প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এসব বিতাড়িত অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকরা আগের পদে বহালের জন্য দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে দাবিও জানিয়েছিলেন কয়েকবার।
পদবঞ্চিত আনোয়ার ইসলাম তালুকদার বলেন, দেশের শিশুদের আগামী দিনের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে স্বার্থলোভী লোকদের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছি আমরা। স্বার্থান্বেষীরা এই সংকটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে, দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে নিয়ে এমন নিষ্ঠুর নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে, যা অস্বাভাবিক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।
তিনি আরো বলেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ করিয়েছেন। এই অনৈতিক, অন্যায় ও মবজাস্টিসের মতো বর্বরতার কবলে পড়েছি আমরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্প বেতনে নিয়োজিত শিক্ষকেরা। ফলে কেউ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কেউ চাকরি হারিয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কেউবা ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূর-দূরান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই হয়রানি ও বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই, নিরাপদে বাঁচতে চাই।