
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, প্রমোশন ও বেতন কাঠামোর কি সংস্কার হয়েছে বা হওয়ার প্রক্রিয়া কি চলমান আছে!
তিনি বলেন, (শিক্ষক নিয়োগের জন্য) দরখাস্তের ১০ কপি জমা দিতে হবে। সঙ্গে ১০ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে। সত্যায়িত!
অধ্যাপক কামরুল হাসান কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, এটা পৃথিবীর কোনো দেশে আছে! পৃথিবীর কোন দেশে এক কপির বেশি চাওয়া হয়! এখানে ১০ কপি মানে ১০০ জন দরখাস্ত করলে কী পরিমাণ কাগজের স্তূপ তৈরি হবে, কল্পনা করতে পারেন!
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাবি’র অধ্যাপক কামরুল হাসান তার ফেসবুক পোস্টে এ মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক কামরল হাসান বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া তুলনা ধরে লেখেন, এখানে বাংলাদেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞাপন চিত্র কমেন্ট থ্রেডে দেখুন। এর সঙ্গে বাংলাদেশের যেকোনো একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে কি কোনো পার্থক্য আছে! কী কী চাওয়া হয়েছে, দেখুন!
তিনি বলেন, দরখাস্তের ১০ কপি জমা দিতে হবে। সঙ্গে ১০ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে। সত্যায়িত! এটা পৃথিবীর কোনো দেশে আছে!
অধ্যাপক মামুন জানতে চান, পৃথিবীর কোন দেশে এক কপির বেশি চাওয়া হয়! এখানে ১০ কপি! মানে, ১০০ জন দরখাস্ত করলে কী পরিমাণ কাগজের স্তূপ হবে কল্পনা করতে পারেন!
সব শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সত্যায়িত কপি! ‘মাইন্ড ইট’ (Mind it- মনে রাখুন) সত্যায়িত কপি অর্থাৎ আপনাকে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা শিক্ষকের কাছে যেতে হবে তাকে ১০ কপি দরখাস্তের সব সার্টিফিকেট, মার্কশিট ও অন্যান্য ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করে, সিল দিয়ে, সত্যায়িত করতে অনুরোধ করতে হবে। এইটা কী পরিমাণ ‘পেরা’ (ঝামেলা) বুঝতে পারছেন!
তারপর আবার NID-এর (জাতীয় পরিচয়পত্র) কপিও দিতে হবে এবং ১০টি কপিই সত্যায়িত হতে হবে। Are kidding me! (আপনি কি আমার সঙ্গে মজা করছেন!)
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমাকে বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার প্রমাণও দিতে হবে। আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদি যথেষ্ট নয়!
বিভিন্ন দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, এই ধরনের একটা বিজ্ঞাপন আপনি বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে যদি দেখান, আপনি পুরো বাংলাদেশকে হাসির খোরাক দেবেন! বিশ্বের কথা বাদ দিন, ভারতের আইআইটি বা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের শিক্ষকদের দেখান অথবা চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখান! তারা হাসবেন! হেসে গড়াগড়ি যাবেন!
ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যতদিন না আপনি ইউনিভার্সাল করবেন, ততদিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হবে না!
সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য প্রভাষকদের ২২ হাজার টাকা বেতন স্কেল দিলে হবে না! আরে, একজন ছাত্র ‘A’ লেভেলের ছাত্রকে প্রাইভেট পড়িয়েই তো এই পরিমাণ টাকার কাছাকাছি পেয়ে যায় আর একই সঙ্গে দুটো পড়ালে নিশ্চিত…
তিনি একজন গাড়িচালকের বেতনের সঙ্গে শিক্ষকের বেতনের তুলনা তুলে ধরে বলেন, বাসার গাড়ির ড্রাইভারও আজকাল ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসে পান। এই (বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান) বেতন কাঠামোই শিক্ষকদের পার্ট-টাইম পড়াতে বাধ্য করে আর এর মাধ্যমেই বেশি বেশি পার্ট টাইম পড়ানোর ধারা শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে অধ্যাপক কামরুল হাসান জানতে চান, এই বেতন স্কেল দিলে পিএইচডি ছাত্রদের কত দেবেন! বিশ্বমানের দেশি ও বিদেশি পোস্ট-ডকদের কত দেবেন! বিদেশি গেস্ট অধ্যাপক নিয়োগ বা স্থায়ী অধ্যাপক পেতে চাইলে এই বেতন দিয়ে তাদেরকে কীভাবে আনবেন!
নিজের মন্তব্যের শেষে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন উপসংহার টেনে বলেন, ‘শিক্ষায় সংস্কার না করলে দেশে সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ তৈরি করতে পারবেন না’!