ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ডিসি সম্মেলনে শিক্ষার কী হলো

শিক্ষা

মাছুম বিল্লাহ, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

ডিসি সম্মেলনে শিক্ষার কী হলো

তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শেষ হয়েছে। এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো মুক্ত আলোচনা। এই পর্বে সরকারপ্রধানের সঙ্গে সরাসরি মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন ইস্যু ও সমস্যা তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা। তাই এ ‘মুক্ত আলোচনা’ ডিসি সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন।

ওই অধিবেশনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষার দুর্নীতি নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা দেন ডিসিদের। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষকদের নিয়ে স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনে অনেক দুর্নীতি আছে। এগুলোতে একটু নজরদারি করতে হবে। শিক্ষকরা ঠিকমতো ভাতা পান না, স্কুল পরিদর্শকদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। এ বিষয়গুলোও নজরদারিতে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদে যারা ছিলেন, তারা চলে গেছেন। চর দখলের মতো নতুন প্রভাবশালীরা সেটা দখলের চেষ্টা করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র দিয়েছি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে বিএ পাস এবং কলেজের পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে মাস্টার্স হতে হবে। এটিতে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।

তবে, শিক্ষার এতোসব বিষয় ডিসিদের পক্ষে সমাধান দেয়া কতোটা বাস্তবসম্মত সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। একটি বিষয় শিক্ষাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে সেই বিষয়টি ডিসি সম্মেলনে সেভাবে উঠে আসেনি। সেটি যেহেতু উঠে আসেনি তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে, জেলা প্রশাসকরা তাদের নিজ এলাকার শিক্ষা বিষয়ে কতোটা ওয়াকিবহাল আছেন। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কী করছে সেই বিষয়টি কিন্তু উঠে আসা উচিত ছিলো। কারণ, গত দুই বছর যাবৎ একটি ভুল কারিকুলাম নিয়ে সবাই অন্ধকারে ছিলো, কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। না শিক্ষক, না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, না অভিভাবক, না শিক্ষার্থী। এতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন। আর যারা আসতেন তারাও নিয়মিত ছিলেন না। বিদ্যালয় আর শিক্ষক এ অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তারা মোটামুটি তাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, রান্নাবান্না আর কিছু গান-বাজনা দিয়ে চালিয়ে দিতেন যাতে কোনোভাবেই সিংহভাগ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো না। সে অবস্থা সামাল দেয়ার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যায়নি বা হয়নি। শুধু পুরাতন কারিকুলামে ফিরে যাওয়ার কথা বলা ছাড়া। অনেক বিষয় এখনো অস্পষ্ট। শিক্ষকদের এখনো প্রশ্নের ধরন, মূল্যায়ন আর পড়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা জন্মেনি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি যতোটা দেখেছি শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত বিদ্যালয়ে এখনো আসছেন না। আজ যারা আসেন, কাল তারা আসে না। এ ঘটনা প্রায় সব বিদ্যালয়েই ঘটছে, তার ওপর সব বই হাতে না পাওয়ায় তাদের অনিয়মিতর ছন্দে যেনো ‘ঢোলের বারি পড়েছে’। আমি জানি না ডিসি সম্মেলনে আসার পূর্বে ডিসিরা উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও কিছু শিক্ষকদের সঙ্গে বসেন কি না, তাদের কিছু প্রতিনিধি বিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন কি না এবং সেটি অবশ্যই কাউকে না জানিয়ে করা উচিত বিদ্যালয়গুলোর প্রকৃতি চিত্র জানা ও দেখার জন্য। তা না হলে অনেক কথাবার্তাই শুধু বলার জন্য বলা।

যদিও সম্মেলনে কোনো কোনো ডিসি বলেছেন, উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাদান বিষয়টি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এখানে বলা প্রয়োজন, আপনি একশতজন অভিভাবককে জিজ্ঞেস করেন, আপনার ছেলে বা মেয়েকে আপনি ভবিষ্যতে কি বানাতে চান। দেখবেন প্রায় সবাই শিক্ষক ছাড়া তাদের ছেলেমেয়েদের অন্যকিছু বানাতে চান। এই অবস্থা হলে আমরা ভালো শিক্ষক কোথায় পাবো? বিষয়টি পুরো জাতির জন্য চিন্তার খোরাক নয় কি!

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

জনপ্রিয়