ঢাকা রোববার, ০৯ মার্চ ২০২৫ , ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সুদের টাকা দিতে না পারায় নওগাঁয় শিক্ষককে তালাবদ্ধ

শিক্ষা

আমাদের বার্তা, নওগাঁ

প্রকাশিত: ২০:২৭, ৬ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২০:৫২, ৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

সুদের টাকা দিতে না পারায় নওগাঁয় শিক্ষককে তালাবদ্ধ

সুদের টাকা দিতে না পারায় নওগাঁয় শিক্ষককে তালাবদ্ধ

সুদের টাকা দিতে না পারায় নওগাঁয় শিক্ষককে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষকের নাম নগেন্দ্র নাথ দেবনাথ। তিনি নওগাঁ শহরের চক প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক।

শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ দেবনাথকে থানায় ডেকে এনে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, লক্ষ্মী রাণী নামের এক সুদ ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে নারী ও শিশু ডেস্কে সাড়ে তিন ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখেন ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে সেই শিক্ষককে ওসির রুমে নিয়ে এসে বসানো হয়।

বুধবার (৫ মার্চ) বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।

ভক্তভোগী নগেন্দ্র নাথ দেবনাথের বাড়ি পার-বাঁকাপুর হলেও দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানেই থাকছেন।

ঘটনাটি জানাজানির পর ‘সুদের’ বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ থানার ওসি এবং লক্ষ্মী রাণীর পক্ষে আসা ব্যক্তিরা।

জানা যায়, ব্যবসার কাজে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লক্ষ্মী রাণীর কাছ থেকে চড়া সুদে তিন দফায় মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ। সেই টাকার বিপরীতে লক্ষ্মী রাণীকে মাসিক মুনাফা হিসাবে ২২ হাজার টাকা দিতে হতো তাকে।

একদিকে, ব্যবসায় লোকসান, অন্যদিকে একের পর এক ঋণের বোঝা মাথায় চেপে বসে শিক্ষক নগেন্দ্র নাথের ওপর। সে কারণে একসময় পালিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। এমনকী তার এলাকার বিভিন্ন পাওনাদারদের কারণেও হয়েছিলেন এলাকা ছাড়া। এখনো যেতে পারেন না এলাকায়।

এদিকে, মুনাফা দেওয়া বন্ধ হওয়ায় তৎকালীন এক এমপির সুপারিশে লক্ষ্মী রাণীর শ্বশুরবাড়ি মহাদেবপুর উপজেলার এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দুই থেকে তিন বছর আগে কয়েকটি ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয় শিক্ষক নগেন্দ্র নাথের কাছ থেকে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ দেবনাথ বলেন, ‘বুধবার হঠাৎ করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি স্যারের কল পেয়ে থানায় আসি। থানায় এসে জানতে পারি, লক্ষ্মী রাণী নামের একজন আমার নামে অভিযোগ করেছেন। লক্ষ্মী রাণীর কাছে থেকে সুদের ওপর টাকা নিয়েছিলাম। বিভিন্ন সময় সুদের টাকা দিয়েছি।

এক সময় টাকা দিতে অপরাগত প্রকাশ করায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি স্যার আমাকে এখনই টাকা দিতে বলেন। যদি না দিতে পারি, তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে কোর্টে চালান করে দেবেন বলে জানান আমাকে’।

তিনি আরো বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমাকে দুপুর সোয়া ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থানাতে আটকে রাখে।

পরে আমার প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং কালিতলার মিঠু নামের এক ভাইয়ের সহযোগিতায় এবং ওসি স্যারের হস্তক্ষেপে রোববার এ বিষয়ে একটি মিটিং হবে। সেখানে অল্প করে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা লক্ষ্মী রাণীকে দেওয়ার শর্তে আমাকে থানা থেকে ছেড়ে দেন ওসি স্যার’।

শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমি তাকে সুদ বাবদ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা শোধ করেছি এবং তার ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা শোধ করেছি অথচ এই লক্ষ্মী রাণী পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এখন আমার একটাই চাওয়া, আমি যেন একটা সুষ্ঠু পরিবেশে চাকরিটা করতে পারি এবং সেইসঙ্গে সঠিক সমাধান হওয়া’।

একইভাবে সঠিক সমাধান চেয়ে শিক্ষক নগেন্দ্র নাথের ছোটভাই মিলন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘আমার দাদাকে ওসি ডেকে নিয়ে এসে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। টাকাগুলো ফেরত দিলে মামলা দেবে না অন্যথায় মামলা দেবে বলে হুমকি দেন। সুদের পাওনা টাকার জন্য তিনি আমার দাদার সঙ্গে এমনটি করলেন, যা মোটেও কাম্য নয়!

তিনি বলেন, আর ওই মহিলা কী অভিযোগ দিয়েছিলেন, সেটা ওসি ব্যাখ্যা দেবেন। লক্ষ্মী রাণী আমার দাদার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে সই নিয়েছেন!

এদিকে, ওসির সামনে আরো দুই, একজনকে টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন লক্ষ্মী রাণী এবং নগেন্দ্র নাথ লাখে দুই হাজার টাকা লাভ দিতে চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

মাঝে মাঝে লাভের টাকা দিতে চেয়েও দেননি বলে অভিযোগ করেন লক্ষ্মী রানী।

জানতে চাইলে লক্ষ্মী রানী বলেন, ‘শোনেন ভাই, আমি একটা গরিব মানুষ। ওই চ্যাংরা (শিক্ষক নগেন্দ্র) আমার বাসায় পড়াতো। আমি ওকে টাকাটা ধার দিছি। ওই টাকাটা নেবো, এই জন্য আমি এসেছি। সর্বশেষ, টাকা দিতে রাজি হয়েছে’।

সে কারণে তিনি মামলা করবেন না জানিয়ে আরো বলেন, তারা সবাই বসে ‘মিউচাল’ করে দেবেন। আমি তাকে এমনিই ধার দিয়েছি। সুদের ব্যবসা করি না।

এ বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই টাকা পাবেন তার কাছে থেকে। সে কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) গাজিউর রহমান মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে জানান, নগেন্দ্র নামের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চেক ডিজ-অনারের ৩টি মামলা রয়েছে। তার কাছে আরো অনেকে টাকা পাবেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি, একজন নারীর কাছ থেকে তিনি ৫ লাখ টাকা নিয়ে আর ফেরত দেননি। টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন বলে সদর থানায় ওই নারী লিখিত অভিযোগ করেন।

সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে থানায় ডাকা হয়। পরবর্তীতে তিনি তার বক্তব্য দিয়ে চলে যান। তাকে আটকে রাখার বিষয়টি সঠিক নয়। এরপরেও যদি ওসির বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানালে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয়