
চট্টগ্রামে হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমানকে। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সন্তান। এছাড়া মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎসহ দুর্নীতির মামলা রয়েছে।
গত ৯ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও তা প্রকাশ পায় বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ)।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক আদেশে মুজিবুর রহমানকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ আদেশে গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য করা হয়েছে মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমকে। এ ঘটনায় কলেজ জুড়ে চলছে সমালোচনা।
জানা গেছে, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই কমিটিতে তার ছেলে মুজিবুর রহমান বিদ্যোৎসাহী সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২৯ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা অ্যাডহক কমিটি বাতিল করে সরকার। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তদবির করে এই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে নেন আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান।
হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজিদ মেহরাব বলেন, মুজিবুর রহমান এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ভূমিদস্যু। মুজিব আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে এই এলাকার মানুষকে অত্যাচার করেছে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় তিনি পলাতক। এমন একজন ফ্যাসিস্টদের দোসর ও তার পিএসকে নিয়ে গভর্নিং বডি কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্ত ছাত্র-জনতার রক্তের সাথে বেঈমানি। আমরা এই গভর্নিং বডির কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ৩৩ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। রাজনীতিমুক্ত কলেজ হিসেবে বেসরকারি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচিত। ৫ আগস্টের আগে কলেজটি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন সাবেক মন্ত্রী বিএসসি’র পুত্র মুজিবুর রহমান। মুজিবুর রহমানের একক আধিপত্যে এই কলেজটি পরিচালনা হতো। তার ইচ্ছামতো চলতো শিক্ষক নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতি। প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের অডিট হিসাব সম্পর্কে জানতো কলেজ সংশ্লিষ্ট কেউ।
কলেজ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজে বছরে আয় হয় সাড়ে ৮ কোটি টাকা। সকল বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ মিলে ব্যয় হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাকি আয় ৫ কোটি টাকার হিসেব আর পাওয়া যেতো না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের বছরের ১৩ মে চট্টগ্রামের উত্তরা ব্যাংকের প্রায় ৩১ কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলায় মুজিবুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। মুজিবুর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন। এ ছাড়া ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে রাতের ভোটের নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ থেকে চট্টগ্রাম-৮ ও চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেন। যদিও সেবার তাকে মনোনয়ন দেয়নি দল।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। আর মুজিবুর রহমান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ হয়নি।