
শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে- ব্যক্তির সামগ্রিক সুষম বিকাশ: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, একজন ব্যক্তির সামগ্রিক সুষম বিকাশ সাধন। যদি জাতি হিসেবে ভালো থাকতে চাই, তাহলে এর বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, আর্থিক স্বচ্ছতা থাকলেও প্রকৃত শিক্ষা না-থাকলে সুস্থিত জীবন-যাপন করতে পারবো না। শিক্ষাটা অবশ্যই আনন্দময় হওয়া উচিত।
রোববার (৯ মার্চ) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনে কক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত মাঠ প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা তিনি বলেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, শিশুদের যুক্তিশীলতা, সৃজনশীলতা এবং অন্যের প্রতি দায়-দায়িত্ব শেখানো উচিত। তা না হলে আমরা আগাতে পারবো না। শুধু শিক্ষক নয়, একজন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি ভেবে দেখবেন। এর অন্য কোনো পথ নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দেবব্রত চক্রবর্তী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহীন মিয়া।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে। শিশুরা যাতে মাতৃভাষায় সাবলীলভাবে লিখতে, পড়তে ও গণিত করতে পারে- সে বিষয়টি অবশ্যই করতে হবে। এর থেকে নিচে নামা যাবে না। শিশুরা কেন পারে না, সেটা দেখতে হবে। শিশুরা যাতে পারে, সে টার্গেট ঠিক করতে হবে। প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে স্কুলগুলো পরিচালনা করতে হবে। স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটি দেখতে হবে। এর উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, যারা ভালো করছে, তাদের পুরস্কৃত করবো। যারা ভালো করতে পারছে না, তাদের সাহায্য করবো। ফাঁকিবাজদের তিরস্কৃত করবো।
শিক্ষা কাঠামোর সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার অনেক বড় পরিবার। এর জনবল, আর্থিক ব্যয় ব্যবস্থাপনা ব্যাপক। প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি মানুষের ন্যূনতম যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা পূরণ অসম্ভব নয়। মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর, অভিভাবক, শিক্ষকরা মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলায় ৬শ ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
উপদেষ্টা পরে কক্সবাজারের লংবিচ হোটেলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং ইউনিসেফ আয়োজিত ‘লোকাল লেভেল অফিসিয়ালস অন ইমপ্রুভড এক্সেস অ্যান্ড ইউজ অব ওয়াস ফ্যাসিলিটিস’বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন।
উপদেষ্টা এরপর কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারনালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং রামু টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতাকেন্দ্রিক সাক্ষরতা ‘স্কিলফো’ প্রকল্পের (পাইলট) চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতাকেন্দ্রিক সাক্ষরতা ‘স্কিলফো’ প্রকল্পটি (পাইলট) কক্সবাজারের আটটি উপজেলা কক্সবাজার সদর, উখিয়া, রামু, টেকনাফ, চকরিয়া, ঈদগাঁও ও মহেশখালীতে চলমান আছে।
প্রকল্পের মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে ২০২৫-এর ৩০ জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে, প্রায় ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পের অর্থের উৎস ও অনুদান-গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন এবং গ্রান্ট এজেন্ট ইউনিসেফ।
স্থানীয় জেলার ১৪-১৮ বছর বয়সী ৬ হাজার ৮শ ২৫ জন বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-কিশোরী ১৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।