
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অপসারণের দাবিতে ছাত্রফ্রন্টের বিক্ষোভ
সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং জননিরাপত্তা দানে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
সোমবার (১০ মার) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সারাদেশে অব্যাহত নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জন-নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক নওশিন মুশতারী সাথী, সদস্য পঙ্কজনাথ সূর্য এবং ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি শাহিনুর আক্তার সুমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা এমন একটা সময়ে এই সমাবেশ করছি, যখন ৮ বছরের শিশু আছিয়া হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আছিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখলে স্বাভাবিক থাকা যায় না।
এর আগে আমরা দেখেছি, সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তার আগে নুসরাতকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। কুমিল্লায় তনুকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। তনুর বাবা গত ৮ বছর ধরে বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নৌকায় ভোট দেননি বলে যুবলীগের নেতারা চার সন্তানের জননীকে ধর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দিয়েছিল। এ রকম ঘটনা প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখতাম কিন্তু বিচার পাইনি।
তারা বলেন, বাংলাদেশের সব গণআন্দোলনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও তাদের কোনো সামাজিক নিরাপত্তা নেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুমাইয়া শিকদারসহ যে নারীরা জুলাই অভ্যুত্থানে সামনে সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছিলেন, তাদের সেখানে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রক্টর তাদের নিয়ে নোংরা বক্তব্য দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীকে তার পোশাক ও শরীর নিয়ে নোংরা মন্তব্য করার পরেও কথিত ‘তৌহিদী জনতা’ নারী নিপীড়ককে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে।
এই ‘তৌহিদী জনতা’ জনগণের ওপর শাসকদের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে না। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তার বিরুদ্ধে নামে না। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নামে না। তারা অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দিতে চায়। তারা জনগণের পক্ষের শক্তি না। তারা নারীর ওপর নিপীড়ন হলে নিপীড়কের পক্ষে দাঁড়ায়।
এ ভাবে সমাজে চলমান সমস্ত অন্যায়-অত্যাচার ও নারী নিপীড়ন-ধর্ষণকে তারা বৈধতা দেয়।
ধর্মীয় বক্তব্য, ওয়াজ মাহফিলে নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। সিনেমা, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপনে, সাহিত্যে বিভিন্নভাবে নারীদের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে নারীর ওপর পুরুষের যে আধিপত্যমূলক মানসিকতা, তার বীজ তৈরি হয়। এসব অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মুনিয়া, নুসরাত, তনু, আছিয়াসহ বাংলাদেশে ঘটেছে, এ সব ধর্ষণের বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পরিশেষে, ফ্রন্টের নেতারা সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী- শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানান। এই ঘটনাগুলোতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জন-নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, মধুর ক্যান্টিন প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গন্থাগারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।