ঢাকা রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫ , ১ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

মাদরাসা জাতীয়করণের নামে কোটি টাকা লেনদেন

শিক্ষা

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

মাদরাসা জাতীয়করণের নামে কোটি টাকা লেনদেন

অনুদানভুক্ত ১৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ ঘোষণার পর এক শ্রেণির দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় নামসর্বস্ব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করে দেওয়ার নামে দালালেরা মাদরাসাপ্রতি ১০ লাখ টাকা আদায় করছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, দালালচক্রের ফাঁদে পরে চাকরি জাতীয়করণের লোভে মাদরাসার শিক্ষকরা টাকা দিচ্ছেন। দ্রুত ওই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ১১৯টি নামসর্বস্ব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার তালিকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অলি আহাদ বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন।

ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর ৭৬টি আমতলীর ও ৪৩টি তালতলীর। এর মধ্যে দুই উপজেলায় অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র মাদরাসার সংখ্যা মাত্র ছয়টি। এ মাদরাসাগুলো হলো পূর্ব চিলা হাসানিয়া, মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া, উত্তর ঘোপখালী, মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া নাচনাপাড়া, কুতুবপুর ইসরাইলিয়া ও তালতলীর চামোপাড়া মজিদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। এ মাদরাসা ছয়টি অনুদান পেলেও গত দুই/এক বছরে কোনো শিক্ষার্থী মাদরাসায় আসেনি বলে জানা যায়। শিক্ষকেরা কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী দেখিয়ে আসছেন। বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে মাদরাসায় এলেও উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে খাতা বগলদাবা করে চলে যান।

স্থানীয়রা বলেন, ওই সব মাদরাসায় কোনো দিন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আসতে দেখিনি। জরাজীর্ণ ঘরগুলো সব সময়ই তালাবদ্ধ থাকে। এ ছাড়া অনুদানবিহীন ১১৩ মাদরাসার অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই, শিক্ষার্থী তো দূরের কথা। ২০১৮ সালে কিছু মাদরাসাল ঘর তুলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে এসব মাদরাসার নামে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে।

আমতলীর ৭৬টি মাদরাসায় ৯ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী এবং তালতলীর ৪৩টি মাদরাসায় ৫ হাজার ৯৫০ শিক্ষার্থী দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে দুই-একটি ছাড়া কোনো মাদরাসায় শিক্ষার্থী নেই।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় কর্তৃপক্ষ আমতলীতে নামসর্বস্ব মাদরাসাসহ ৭৬টি এবং তালতলীতে ৪৩টি মাদরাসার তালিকা বরগুনা জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিলে আনন্দে মেতে ওঠে আমতলী-তালতলীর একাধিক দালাল চক্র। তারা জাতীয়করণের নামে মাদরাসাপ্রতি ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালালেরা ভয় দেখান এই বলে যে—দ্রুত টাকা দেন, নইলে মাদরাসার জাতীয়করণের তালিকায় নাম যাবে না। যারা আগে টাকা দেবেন তাদেরটা আগের তালিকায় জাতীয়করণ হবে। বিভিন্ন সরকারি দফতরে টাকা দিতে হবে। নইলে জাতীয়করণ হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষক বলেন, প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে দালালেরা মাদরাসাপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকা চাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু শিক্ষক দালালদের টাকা দিয়েছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী জালাল পিয়াদা ও আমতলী উপজেলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন এই দালালি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে জালাল পিয়াদারের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

আমতলী উপজেলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আলাউদ্দিন টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাদরাসার তালিকা চেয়েছেন, তাই তালিকা দিয়েছি। শিক্ষার্থী নেই এমন মাদরাসার নাম দিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

গত সোমবার আমতলী উপজেলার অনুদানভুক্ত মাদরাসা কুতুবপুর ইসরাইলিয়া, মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া, মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া ও তালতলী উপজেলার একমাত্র চামোপাড়া মজিদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা ঘুরে দেখা গেছে, মাদরাসার ঘর আছে; কিন্তু কত দিন আগে এ মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থী এসেছে তা বলা মুশকিল।

কুতুবপুর ইসরাইলিয়া স্বতন্ত্র মাদরাসার দোচালা টিনের ঘরের কক্ষ খড়কুটায় ভরা দেখা যায়। কোনো বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ছিল না। এ মাদরাসার ইবতেদায়ি প্রধান গোলাম কিবরিয়া বলেন, এখনো বই পাইনি। তাই ক্লাস করতে পারছি না।

মধ্য পাতাকাটা আমানদিয়া মাদরাসায় ভাঙাচোরা বেঞ্চ-টেবিল দেখা যায়। কক্ষ ময়লা-আবর্জনায় ভরা ছিল। এ মাদরাসার ইবতেদায়ি প্রধান মাওলানা আলাউদ্দিন দাবি করেন, তারা গত বছর ক্লাস করেছেন। এ বছর বই না পাওয়ায় ক্লাস শুরু হয়নি। এখন রোজা ও ঈদের বন্ধ।

অনুদানবিহীন তালিকার ৪০ নম্বর গোজখালী তাছাউফ স্বতন্ত্র মাদরাসার কোনো ভবন নেই। স্থানীয় নুর জামাল, সফিকুল্লাহ ও আবিদ বলেন, ভবন তো নেই, শিক্ষার্থীও নেই। কিন্তু কীভাবে তালিকায় নাম আসল তা আমরা জানি না?

৭৬ নম্বর পশ্চিম কেওয়াবুনিয়া মুজাহিদিয়া, ১৪ নম্বর উত্তর কাউনিয়া, ৫৩ নম্বর কাউনিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার কোনো অস্তিত্ব নেই। স্থানীয়রা বলেন, গত ২০ বছরে দেখিনি এই নামে কোনো মাদরাসার অস্তিত্ব আছে। তালতলীর ২৫ নম্বর পূর্ব গাবতলী এইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসারর কোনো অস্তিত্ব নেই। জাতীয়করণ ঘোষণার পরে মাদরাসার নাম তালিকায় দিয়েছেন।

আমতলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অলি আহাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় তালিকা চেয়েছে। তাই তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু নামসর্বস্ব মাদরাসার নাম কেন তালিকায় পাঠিয়েছেন এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি। তবে টাকার বিনিময়ে তালিকা করা হয়েছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয়