ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫ , ১৭ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ঢাবি জনসংযোগ পরিচালকের সাক্ষাৎকার

শিক্ষা

দৈনিক আমাদের প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ৩০ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২০:০১, ৩০ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

ঢাবি জনসংযোগ পরিচালকের সাক্ষাৎকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবন শেষেও সাংবাদিকতাতেই ছিলেন। সেখান থেকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগে শুরু হলো নতুন কর্মজীবন। কর্মক্ষেত্র আলাদা হলেও কাজের ধরনটা একইরকম রইলো। রিপোর্টিং। তারপর সুনামের সঙ্গে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখন তিনি তার বিভাগের পরিচালক। দৈনিক আমাদের বার্তাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রফিকুল ইসলাম পান্না তুলে ধরেছেন তার পেশাজীবনের খুঁটিনাটি। তার কাজের ধরন ও একাগ্রতা, কার্যক্ষেত্রে করণীয়, সাংবাদিক ও সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ও উঠে এসেছে তার বক্তব্যে।

আমাদের বার্তা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তি আপনি। কেমন উপভোগ করছেন?

রফিকুল ইসলাম পান্না: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি সবসময়। আমি আমার কাজ উপভোগ করছি এবং ভালোভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব তথ্য কী নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়? কীরকম জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে?

আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তথ্য সাপ্তাহিকভাবে হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেই। এই কাজটি করার জন্য আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর, আড়াই হাজার শিক্ষকের, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৭ হাজার সদস্যের ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করেছি। এটা একটা বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিলো, যা করতে আমাদের সময় লেগেছে। সবার ই-মেইল অ্যাড্রেসগুলো সংগ্রহ করার পর আমরা হালনাগাদ তথ্য পাঠাতে শুরু করি। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার আমরা হালনাগাদ পাঠাচ্ছি প্রত্যেকের ই-মেইলে। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজেও যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিদিন কী কী ঘটছে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক- শিক্ষার্থী জানতে পারছেন।

নিজ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কখনো কোনো রাজনৈতিক চাপ ফেস করেছেন কিনা?

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমার ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিলো না। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করছি। আমার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, পত্র-পত্রিকায় চাকরি করার অভিজ্ঞতা, প্রভৃতি কাজে লাগাচ্ছি। এছাড়াও দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কীভাবে এই কার্যালয়ের কাজ এগিয়ে নেওয়া যাওয়া যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করেছি। কেউ আমাকে চাপ দিচ্ছে না, বরং সব মহল থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি।

পেশাজীবনে কোনো নির্দিষ্ট সরকারের আমলে বঞ্চিত থেকেছেন কি?

আমি আমার চাকরি জীবনে কখনো ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার চিন্তা করি না। অতীতেও করিনি, এখনো করি না। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি কাজ দিয়ে আমার অবস্থান টিকিয়ে রাখতে। আমি নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করে আমার অবস্থান ধরে রেখেছি। আমি সব সময় পেশাগত দিকটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। এখনো আমি একইভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জনসংযোগ দপ্তর যদি কোনো সময় ফেল করে, তাহলে একটা প্রতিষ্ঠান ফেল করবে। জনসংযোগ দপ্তরের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই আমি সাপোর্ট দিচ্ছি, আমি সফল হতে পারলে আমার প্রতিষ্ঠা সফল হবে। আর বঞ্চিত থাকার বিষয়? আমি কখনো এসব নিয়ে ভাবিনি। আমি যতটুকু পেয়েছি, আর পাচ্ছি, তাতেই সন্তুষ্ট।

সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তাদের সহযোগিতা পাচ্ছেন কেমন?

সহকর্মীদের সঙ্গে আমার খুবই ভালো ও আন্তরিকতার সম্পর্ক। প্রত্যেকের সঙ্গে আমি কথা বলি। খোঁজখবর নিই প্রতিনিয়ত। যেকেউ যেকোনো বিষয় আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। একজনের সঙ্গে অন্যজনের ব্যক্তিগত সমস্যা হলেও, আমরা পারস্পরিকভাবে সমাধান করার চেষ্টা করি। যার যা মর্যাদা, পিয়ন থেকে শুরু করে উঁচু পর্যায়ে যারা চাকরি করেন, প্রত্যেকের মর্যাদা সমুন্নত রেখে, সম্প্রীতির বন্ধন বজায় রেখে দপ্তরটাকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দপ্তরটাকে স্বচ্ছতা দিয়ে উন্নতির চূড়ায় নিয়ে যেতে চাই আমি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় বিষয় সমন্বয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?

অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে এবং জনসংযোগ দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সচেতন না। আবার বিভাগ-অনুষদগুলো থেকেও আমাদের কাছে সঠিকভাবে তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে দায়িত্বরতরাও সবাই সবসময় আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না।

সঠিক সময়ে তথ্যগুলা আমরা সবসময় পাচ্ছি না। যেখানে ৯০টা বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট আছে, সেগুলোতে প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ঘটছে। সব বিভাগ-অনুষদ থেকে প্রতিদিন আমার কাছে যদি একটা কাজও পাঠায়, তাহলে ৯০টা কাজ হয় আমার হাতে। কিন্তু আমি ২৫-৩০টা বা ৪০টা কাজ দিতে পারছি। সেক্ষেত্রে সবার তথ্যগুলো যদি আমি পেতাম, তাহলে আরো বিস্তৃত পরিসরে আমি জনসংযোগ বিভাগকে গড়ে তুলতে পারতাম।

সাংবাদিকদেরদের সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? যোগাযোগ সহজ করতে করণীয় কী?

আমি নিজে সাংবাদিক সমিতির সদস্য ছিলাম। আমার সাংবাদিকতার জীবন শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করার মাধ্যমে। তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরে আসা যাওয়া করতাম। জনসংযোগ দফতরে যারা কর্মরত ছিলেন, সাংবাদিক হিসেবে তাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিলো।

আবার আমি যখন এখানে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলাম, তখনো আমি সাংবাদিক সমিতির সব সদস্য এবং যারা সদস্য না তাদের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখেছি। তারা যখন যে বিষয়ে আমার সহযোগিতা চান, আমি সবসময় পূর্ণ সহযোগিতা করার চেষ্টা করি, কেউ পরামর্শ চাইলে আমি দিই। সাংবাদিকরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে আমাদের সাথে কাজ করছেন। আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন। এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা চেষ্টা করছি সাংবাদিকদের তথ্য প্রাপ্তি আরো সহজতর করতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরকে আরও গতিশীল করার দরকার আছে কিনা? যদি থাকে, তাহলে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা উচিত?

ভালোর কোনো শেষ নেই। ভালোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। অনলাইনের যতো কাছাকাছি আমরা যেতে পারবো, ততোই শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কাছে, সাধারণ জনগণের কাছে দ্রুত পৌঁছাতে পারবো। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি আমাদের ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে জনসংযোগ দফতরের তথ্যগুলে সবার কাছে পৌঁছে দিতে। আরো কীভাবে দ্রুত করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।

পেশাজীবনের কোনো স্মরণীয় ঘটনা মনে পড়ে কী?

চাকরি জীবনে আমি দুই রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ডাকসু নির্বাচন হলো। সারারাত জেগে ছিলাম। খবরাখবর নিয়ে তৎপর ছিলাম। আরেকটি রাত হলো সাত কলেজের সঙ্গে ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ের যে ঘটনা ঘটলো, সারারাত জেগে ছিলাম। রাত জেগে মিডিয়াগুলোকে তথ্য দিয়েছি।

সার্বিকভাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

আমি যেটা সবসময় বলি- ভালো করতে হলে সবসময় নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, কোনো দপ্তরের কাজ কেউ সফলভাবে সম্পাদন করতে পারেন না। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে কাজ করেন, তাহলে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া সম্ভব। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসবেন, পড়াশোনা করবেন, শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেবেন, গবেষকেরা গবেষণা করবেন সঠিকভাবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে হবে না। যার যা দায়িত্ব, তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। নিজ স্বার্থ উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে বড় করে দেখে যদি সবাই যদি কাজ করে, আর নিজের কাজটা কী সেটা জেনে-বুঝে যদি সঠিকভাবে করে, তাহলেই সবাই সফল হবে।

জনপ্রিয়