
দেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও প্রিন্ট জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের বিশেষ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারের প্রশংসা করে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, গতকাল দৈনিক আমাদের বার্তায় ‘আমি ভিসির ক্ষমতা কমিয়ে ফেলার পক্ষে’ শিরোনামে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের একটি সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ পত্রিকায় পড়ছিলাম। লেখাটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। মনের গহীনে ছোট একটি আশার বীজ বপিত হলো। একই সঙ্গে তক্ষণি মনে পড়লো আমার ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে একটি লেখার কথা। তাই সেই লেখাটিই নিচে কাট এবং পেস্ট করলাম।
গতকাল রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক মামুন বলেন, আমার ম্যাসেঞ্জেরে মাঝে মাঝেই মেসেজ পাঠিয়ে অনেকেই জানতে চায় যে, আমি ভিসিদের নিয়ে এত সমালোচনা করি তাহলে, আমি ভিসি হলে কী করতাম। আজকেও একজন জানতে চেয়েছে। তাই উত্তরটা জনে-জনে আলাদা করে ইনবক্স করে না জানিয়ে সবাইকে জানালাম। তার অর্থ এই না যে, আমি ভিসি হতে চাই। আমার ধারণা, আমার এইসব দাবির কথা শুনলে আমাকে কেউ ভিসি বানাবে না। আর যদি বানায়ই তাহলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, উচ্চ শিক্ষার মান অনেক উন্নত করে ছাড়বো। ভবিষ্যতে যারা ভিসি হবেন তারাও আমার এই লিস্ট অনুসরণ করতে পারেন।
১. আমি ভিসি হলে প্রথম যে কাজটি করবো তা হলো, ভিসির ক্ষমতা কমানোর ব্যবস্থা করবো। দুনিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের এত ক্ষমতা নেই যত ক্ষমতা আমাদের ভিসিদের। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রোমোশনের দায়িত্ব থেকে ভিসিদের অব্যাহতি দিয়ে এটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ডিনের হাতে ছেড়ে দিলেই হয়। হার্ভার্ড এমআইটি কিংবা ক্যামব্রিজের ভিসিকে কেউ জানেনা এবং জানার প্রয়োজন নেই। এই একটি কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাম-কুকাম অর্ধেক কমে যাবে।
২. শিক্ষক ছাত্রদের নিয়ে সরকারের কাছে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানতাম, যাতে ছাত্ররা ন্যূনতম একটা পড়ার টেবিল পায়, ঘুমানোর বিছানা পায়, কাপড় রাখার একটা ওয়ার্ডরোব পায় এবং মানসম্পন্ন খাবার পায়। ৩. আমি প্রথমবর্ষের সব ছাত্রদের হলে থাকার ব্যবস্থা করতাম। শেষ বর্ষের ছাত্রদের চেয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হলে জায়গা দেয়া বেশি জরুরি। ৪. শিক্ষক নিয়োগে আন্তর্জাতিক মানের সার্চ কমিটি করতাম। ৪. গবেষণার জন্য যথেষ্ট বরাদ্দের দাবি জানতাম।
৬. যোগ্য শিক্ষকদের যোগ্যতার আলোকে প্রমোশন ও রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা করতাম। সবাই সমান না। যে যত বেশি যোগ্য তাকে বয়স কিংবা অভিজ্ঞতার অজুহাতে আটকে না রেখে দ্রুত প্রমোশনের ব্যবস্থা করতাম। ৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে গাছ-গাছালি আর পাখ-পাখালির কলতানে যেনো মুখরিত থাকে সেই ব্যবস্থা করতাম। ৮. লাইব্রেরিকে আধুনিকায়ন করতাম যেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ দর্শনীয় ভবনটি হয় লাইব্রেরি। ৯. সরকারের কাছে দাবি জানতাম ছাত্রশিক্ষক তথা আপামর জনতা বিদেশ থেকে বই কিনতে বা আনতে যেনো ট্যাক্সের ঝামেলায় পরতে না হয়। এমপিরা কোটি-কোটি টাকার ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি আনতে পারে আর, আমি শিক্ষক হয়ে নিজের লেখা প্রকাশক থেকে পাঠানো সৌজন্য কপি পেতেও টেক্স দিতে হবে? যাহোক সেই সময় ফেসবুকে লেখার কারণে কয়েকজন ট্যাক্স কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিনা টেক্সেই বইটা পাই। তাতেতো সমস্যার সমাধান হলো না। মাত্র এক মাস আগেই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছে আমি কীভাবে আমার বই এয়ারপোর্ট থেকে এনেছি। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা যদি বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে বই না আনতে পারেন তাহলে পড়াশুনা করবে কীভাবে? খোঁজ নিয়ে জেনেছি ইউরোপের কোনো দেশ ব্যক্তিগত বইয়ে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। সেটা যতগুলো বই-ই হোক। ছাত্র শিক্ষকদের পড়ার বইয়ে ট্যাক্স বসাতে পারে কেবল অসভ্য দেশ, যারা চায় না দেশের মানুষ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক।
১০. পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন পদ্ধতির পরিবর্তন করতাম এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক সিস্টেম বাদ দিতাম। ১১. শুধু শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ভিসি-প্রোভিসি থাকার বিধানটা বাদ দেন আর সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটা ৩টি স্তরে ভাগ করুন। দেখবেন মানুষ আপনার অবদান মনে রাখবে। এমন নীতিমালা করুন যাতে ছাত্ররা আপনার নামও না জানে। আপনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করার অনেক সময় পাবেন। সারা পৃথিবীতে এমনটাই হয়। ঘরে বাহিরে রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী হওয়ার শিক্ষাটা বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রই স্বৈরাচারী। ভিসি আসে ভিসি যায়। চলে যাওয়ার পর কোথাও বসলে পাশের সিট খালি থাকলেও কেউ পাশে এসে না বসতেও দেখেছি।